ঘরে বসে টাকা রোজগার করার সবচেয়ে সহজ পথ হলো ফ্রিল্যান্সিং। আপনার যদি একটি কম্পিউটার এবং একটি ইন্টারনেট সংযোগ থাকে, তাহলে আপনিও পারেন আপনার আগ্রহ ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ বেছে নিতে। তবে যেকোনো অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মাধ্যমে কাজ পেতে হলে শুরুতেই আপনাকে একটি সংক্ষিপ্ত, মার্জিত ও পেশাদার কভার লেটার লিখে বিনিয়িগকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।  কভার লেটার লেখা ফ্রিল্যান্সিং জগতে পা দেয়ার প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। একটি সুন্দর ও নিখুঁত কভার লেটার আপনার ক্যারিয়ারকে অনেকাংশেই সহজ করে তুলবে। বিনিয়োগকারী আপনার কাজের ফলাফল ও নির্ভুলতা দেখার আগে আপনার কভার লেটার দেখেই আপনার সম্পর্কে ধারণা করবে। অর্থাৎ, একটি ভালো কভার লেটার আপনাকে কাজ পাইয়ে দিতে সাহায্য করবে, আর আপনার কাজটি বিনিয়গকারীকে সন্তুষ্ট করবে কি না তা নির্ধারণ করবে আপনার দক্ষতা। কাজেই আপনি যদি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চান তাহলে সবার শুরুতেই একটি ভালো কভার লেটার লেখা আপনার প্রধান কাজ। 

শুরুতেই আপনার কাজের ক্ষেত্র নির্ধারণ করুন

 কভার লেটার লিখতে বসার আগে চিন্তা করুন আপনি কোন কাজটিতে পারদর্শী। যে কাজটি আপনি ভালো পারেন, ফ্রিল্যান্সিং ফিল্ড হিসেবে সেটিকেই বেছে নিন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনিং এ পারদর্শী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কভার লেটারের মাধ্যমে একজন দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে বিনিয়োগকারির সামনে নিজেকে তুলে ধরুন। আর যদি আপনি একটির বেশি কাজে পারদর্শী হোন তবে একাধিক কভার লেটার লেখার মানসিকতা রাখতে। প্রতিটি কভার লেটারই যেন আপনার নির্দিষ্ট যোগ্যতাকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারে এটি নিশ্চিত করন। তবে এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট কভার লেটার নির্ধারণ করুন, আপনার সব বিষয়ের পারদর্শিতা একটি লেটারে অন্তর্ভুক্ত করলে তা বিনিয়োগকারীকে বিভ্রান্ত ও অনাগ্রহী করে তুলবে। প্রতিটি কভার লেটারে আপনি ঠিক কোন কাজটিতে আগ্রহী ও পারদর্শী শুধুমাত্র তা নিয়েই আলচনা করুন। বিনিয়গকারী আপনার  কাজে সন্তুষ্ট হলে আপনার অন্যান্য যোগ্যতা অনুযায়ী পরবর্তী কাজের জন্য আপনাকেই বেছে নিবে। মনে রাখবেন, একটি কভার লেটারে আপনি জ্যাক অফ অল ট্রেডস হতে চান না, মাস্টার অফ ওয়ান হতে চান।  মনে রাখবেন, আপনি কতটুকু দক্ষ সেটি আপনার কভার লেটারের মধ্য দিতেই প্রকাশিত হবে। কাজেই চেষ্টা করুন আপনার প্রতিভা আপনার কভার লেটারের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে। 

সংক্ষিপ্ত ও মার্জিত একটি কভার লেটার লিখুন

আপনার কভার লেটারটি একটি আবেদন মাত্র, আপনার সংক্ষিপ্ত জীবনী নয়। কাজেই চেষ্টা করুন সংক্ষিপ্ত পরিসরে আপনার বক্তব্য তুলে ধরতে। বিনিয়োগকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় এমন শব্দ ব্যবহার করুন, অতিশায়ন ও চাটুকারিতে বর্জন করুন। একটি দীর্ঘ ও অপ্রয়োজনীয় তথ্যে ভরপুর কভার লেটার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁঁড়াবে এবং আপনাকে একজন অনুপযুক্ত আবেদনকারী হিসেবে উপস্থাপন করবে। একজন বিনিয়োগকারী আপনার কভার লেটারে যে বিষয়গুলো খুঁজবে তা হলো আপনার আগ্রহ, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা। চেষ্টা করুন অল্প কয়েকটি বাক্যে শুধু এই বিষয়গুলো তুলে ধরতে। আপনার কভার লেটারটি এক পৃষ্ঠায় লিখতে হবে, তবে অপ্রয়োজনীয় তথ্য ও অতিশায়ন দিয়ে পুরো এক পৃষ্ঠা পরিপূর্ণ না করে প্রয়োজনীয় তথ্য আকর্ষণীয় ভাবে তার চেয়েও ছোট পরিসরে তুলে ধরাই উত্তম।

একটি পেশাদার অভিবাদন দিয়ে শুরু করুন

কভার লেটারের শুরুতেই বিনিয়োগকারীক অভিবাদন জানান। যদি বিনিয়োগকারীর নাম আপনি জানেন তবে নাম ব্যবহার করুন, আর নাম না জানলে অভিবাদনের স্থানে ‘শ্রদ্ধেয় পরিচালক’ ব্যবহার করুন। অভিবাদন করার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন, কোনো অবস্থাতেই ‘প্রিয়তমেষু’ বা ‘কল্যাণীয়াষু’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করবেন না। সবসময় মাথায় রাখবেন যে আপনি আপনার কোনো আত্মীয়কে চিঠি লিখছেন না, বিনিয়োগকারির সাথে আপনার সম্পর্ক শুধুমাত্র কর্তা ও কর্মীর। কাজেই অপ্রাসঙ্গিক অন্তরঙ্গতা অনেক সময় বিরুপ ফলাফল এনে দিবে। কভার লেটারের প্রতিটি অংশে আপনার পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন। আর বিনিয়োগকারীর সাথে এটিই যদি আপনার প্রথম কাজ হয় তাহলে নাম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিনিয়োগকারীর মনযোগ ধরে রাখা। শুরুতেই আপনার অভিবাদন পড়ে বিব্রত হলে বিনিয়োগকারী আপনার ওপর আগ্রহ হারাবে। 

কোনো অবস্থাতেই অন্যের লেখা নকল করবেন না

সবসময় নিজের কভার লেটার নিজে লিখবেন। এতে আপনার স্বাতন্ত্র ও অভিনবত্ব ফুটে উঠবে। কখনোই অন্যের লেখা ভালো ভেবে তা কপি করে বিনিয়িগকারীকে পাঠাবেন না, কারণ আপনার বিনিয়োগকারী চাইলেই সেটা ধরতে পারবেন। এতে আপনার কাজের পেশাদারিত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে তাঁর মনে খটকা তৈরি হবে। কাজেই অনেক সময়সাপেক্ষ হলেও নিজের কভার লেটারটি নিজেই লিখুন। কারণ আপনার দক্ষতা ও বিশেষত্ব সম্পর্কে আপনার চাইতে ভালো করে কেউ জানে না। চেষ্টা করুন কভার লেটারে এই বিষয়গুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে। বিনিয়গকারী তখনই আপনাকে কাজ দিবে যখন তার মনে হবে যে আপনি বাকিদের চাইতে কাজটি ভালোভাবে করতে পারবেন। আপনার কভার লেটারটিই যদি অন্যের কাছ থেকে নকল করা হয় তাহলে তিনি ভাবতে বাধ্য হবে যে বাকি কাজটুকু করার যোগ্যতা বা আগ্রহও আপনার নেই। আপনার কভার লেটারটি বাকিদের চাইতে ভিন্ন ও বিশেষ মনে হলেই বিনিয়গকারীরা আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে। তবে নিজে লিখতে গিয়ে এটি মাথায় রাখবেন যেনো আপনার কভার লেটারটি অতিশায়িত না হয়। নিজের দক্ষতা ও গুণাবলি সম্পর্কে সৎ থাকুন। কারন কাজ পাওয়ার পর যদি আপনি আপনার প্রতিশ্রুতি না রাখতে পারেন তবে তা ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে

বিনিয়োগকারীকে আপনার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন

একটি যথাযথ কভার লেটারের কাজ হলো আপনার পেশাদারিত্ব, অভিজ্ঞতা, কাজের দক্ষতা ও আগ্রহ ইত্যাদি বিষয়গুলো যথাসম্ভব সীমিত পরিসরে তুলে ধরা। একটি মার্জিত অভিবাদন দিয়ে শুরু করার পর আপনার যোগাযোগ করার কারণ জানান। আপনি কোন কাজটিতে আগ্রহী তা জানানোর পর আপনার প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ পর্যায়ক্রমে তুলে ধরুন। প্রত্যেকটি ধাপ সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে পারলেই বিনিয়োগকারী আপনার প্রতি আগ্রহী হবে এবং কাজটি আপনাকে দিয়ে করাতে স্বস্তি বোধ করবে। তবে কভার লেটারে কখনোই নিজেকে ডেস্পারেট হিসেবে উপস্থাপন করবেন না, আপনার কাজটি প্রয়োজন হলেও নিজের ব্যক্তিত্ব ও পেশাদারিত্ব ধরে রাখুন। তা না হলে বিনিয়গকারী আপনার ওপর আগ্রহ হারাবে। আপনি যদি দক্ষ এবং উপযুক্ত হোন এবং তা আপনার কভার লেটারে তুলে ধরতে পারেন তাহলে বিনিয়োগকারিরা আপনার সাথে নিজ থেকেই যোগাযোগ করবে।   

পরিশেষে একটি কভার লেটার লেখার সময় সর্বদা মাথায় রাখবেন যে আপনি কাজটির জন্য যোগ্য ও উপযুক্ত। দীর্ঘ সময় কাজ না পেলে নিজের ওপর বিশ্বাস হারাবেন না, আপনার কভার লেটারের ভুলগুলো খুঁজে বের করুন, নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলুন। আপনার স্বাতন্ত্রই বিনিয়গকারিদের আপনার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে, কাজেই বাকিরা কী করছে তা না দেখে আপনি কোথায় ভুল করছেন তা খুঁজে বের করুণ। কভার লেটারটিকে সবসময় স্বচ্ছ, সুন্দর ও মার্জিত করে রাখুন। অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করবেন  না। ছোট পরিসরে আপনার কভার লেটারটিকে আকর্ষণীয় করে তুলুন। মনে রাখবেন বিনিয়গকারী এটিই জানতে চায় যে আপনি কাজটিতে পারদর্শী কি না, আপনার কাজটিতে পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না এবং আপনি সুন্দর ও সফলভাবে কাজটি করতে পারবেন কি না। আপনি কাজটিতে কেনো এবং কতটুকু আগ্রহী, আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি, আর্থিক অবস্থা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিশদ আলোচনা তিনি শুনতে চান না। 

কাজেই নিজের ওপর আস্থা রাখুন ও আত্মবিশ্বাসের সাথে একটি অভিনব কভার লেটার লিখে আপনার কাজের পরিধি ও পরিমাণ দু’টিই বৃদ্ধি করুন।

ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে আপনাকে স্বাগতম!