দি নলেজ একাডেমির একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ২০২৬ সালের মধ্যে নতুন ২৫৩,০০০টি সফটওয়্যার ডেভেলপার রোল এর সৃষ্টি হবে৷ এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য টেক জায়ান্ট দেশ যেমন চীন, প্রযুক্তিতে উদীয়মান সম্ভাবনা ভারত এর মতো দেশ সহ পৃথিবীর সর্বত্রই প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও উন্নতির প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু কেন এবং কীভাবে?
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশের সাথে সাথে আমাদের গতানুগতিক শিল্প ও এদের চাহিদার আমূল পরিবর্তন হয়ে চলেছে৷ ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর সীমা নির্ধারণকারী রেখা যেমন দিন দিন অদৃশ্য হওয়ার পথে এগুচ্ছে, সাথে সাথে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এর ন্যায় প্রচুর সম্ভাবনাময় শিল্পের ক্ষেত্র গড়ে উঠছে। এর মধ্যে সবচেয়ে চাহিদামুলক ও অপরিহার্য সেক্টরটি হলো সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি।
সফটওয়্যার ক্ষয়িষ্ণু নয় বরং প্রোগ্রাম করে একে দিন দিন উন্নত করা হয়। কয়েকমাসের মধ্যেই একটি সফটওয়্যারে নতুন ফীচার, বাগ ফিক্সেসসহ বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়ে থাকে৷ ফলে বিভিন্ন টেক ইন্ডাস্ট্রির সফটওয়্যারের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয় এবং সকল কোম্পানিকেই তাদের প্রোডাক্ট শীর্ষে রাখার লড়াইয়ে নামতে হয় নয়তো তার চাহিদা দিন দিন কমতে থাকে৷ এভাবে প্রযুক্তির উন্নতি যেমন একদিকে কর্মসংস্থান এর অভাব সৃষ্টি করছে তেমনিভাবে মার্কেটপ্লেস এ চাহিদার সাথে তাল মেলাতে টেক ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর পরিমান কর্মসংস্থান এরও সৃষ্টি হচ্ছে। টেক জায়ান্টরা সফটওয়্যার শিল্পের অপরিহার্যতা বুঝতে পারছে এবং দিন দিন প্রচুর দক্ষ জনবল নিয়োগের চেষ্টা করছে। ফলে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি হতে যাচ্ছে এই শিল্প বিপ্লবের অনন্য চাহিদাসম্পন্ন একটি সেক্টর।
কীভাবে এই শিল্প বিপ্লবটি এগিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু ধারণা রাখলেই আমরা বুঝতে পারি কেন এই সেক্টরটি এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উদ্ভাবনের পরিমান দিন দিন বহুগুনে বাড়ছে
বিগত ৪০ বছরে ৫০০ মিলিয়ন অ্যাপস তৈরি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তি যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে অনুমান করা হয় আগামী চার বছরে আরো অন্তত ৫০০ মিলিয়ন অ্যাপস তৈরি হবে। এর কারণ প্রথমত, ইন্টারনেট এর সহজলভ্যতা দিন দিন বাড়ছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানের থেকে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ফলে অনেক কম বাধা, কম অর্থ ও সময়ে মানুষ নতুন নতুন প্রজেক্ট করতে পারবে। বাস্তবতা এটাই যে, বর্তমানে একটি স্টার্টআপ এ ২০ বছর আগের চেয়ে হাজার গুণ কম খরচ হয়। যদিও এখনই মার্কেটে যে প্রতিযোগিতা চলছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে ট্রেন্ড এর শীর্ষে যেতে প্রচুর দক্ষতা ও পরিশ্রমেরও প্রয়োজন, তবুও সুযোগ সুবিধা অবশ্যই আমরা আমাদের সেই গ্যারেজ এ এস্পেরিমেন্টস চালানো শুরুর টেক জেনারেশনের চেয়ে হাজার গুণে পেয়ে থাকি।
আর দ্বিতীয় কারণ হলো দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে। ফলে নতুন নতুন ইনোভেশন আসতে বাধ্য। আর এসব ইনোভেশন এর মূলে থাকবে এই সফটওয়্যার সমূহ। বিভিন্ন প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি হার্ডওয়্যার এর সাথে সমন্বয় কারী হিসেবে। এভাবে সব মিলিয়েই নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার এর ব্যবহার বাড়বে অভূতপূর্বভাবে।
অ্যাপস সমুহের কার্যক্ষমতা আরো বাড়বে এবং আকার ছোট হবে
এপ্লিকেশনসমুহে অনেক ডেটা প্যাকেজ প্রয়োজন হয়৷ ধীরে ধীরে ডেটার আকার কমে আসছে৷ বর্তমানে এপ্লিকেশনগুলো বাইট সাইজের হয়। এছাড়া অ্যাপগুলো এপিআই ( অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসেস) মাইক্রোসার্ভিসগুলো ব্যবহার করে, ফলে অ্যাপগুলোর সব ফীচার নিজস্বভাবে তৈরি করতে হয়না। আর ক্লাউড সার্ভিসসমুহের কারণে এখন অ্যাপগুলোও প্রচুর এপিআই ব্যবহার করতে পারছে। এছাড়া ক্লাউড স্টোরেজ এর মতো সার্ভিসগুলিও অ্যাপ্লিকেশন এর আকার ছোট করে ফেলতে সাহায্য করছে। যেমন বর্তমানে এমাজন এর থার্ড পার্টি সার্ভিস – অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস।
সর্বাধিক বিখ্যাত সমস্ত স্টার্টআপস ইতোমধ্যে তাদের ব্যবসায়ের শক্তি এবং তাদের ব্যবসায়িক অংশীদার যেমন টুইটার, ফেসবুক, গুগল এবং অ্যাপলের জন্য পোর্টাল তৈরিতে এপিআই ব্যবহার করছে। ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরো বাড়বে। এসব পরিবর্তন এর জন্য প্রস্তুত হতে হবে সব টেক এক্সপার্টদের।
হার্ডওয়্যার এর ব্যবহারের পরিবর্তন
গত ২০ বছরে হার্ডওয়্যারের পরিবর্তনের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই যে বিগত কয়েকবছরে এর কী আমূল পরিবর্তন এসেছে। হার্ডওয়্যার এর ব্যবহার কমিয়ে সফটওয়্যারের মাধ্যমে কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে এই বিপ্লবটি সম্ভব হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তিতে হার্ডওয়্যারের ব্যবহার আরো কমতে থাকবে, একসময় এর প্রয়োজনীয়তা শুধু নির্ভর করবে এর সাইজের ও ফর্মের গুরুত্বের উপর।
কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের বর্তমান রুপ দেখলেই আমরা এটি বুঝতে পারি। প্রথম যে কম্পিউটারটি তৈরি করা হয়েছিলো সেটি থেকে শুরু করে বর্তমান ডেক্সটপ এর সাইজ এবং কম্পিউটারের প্রায় সকল কাজ এখন মোবাইলেই করা সম্ভব যেটি আকার তুলনা করলে অত্যন্তই ক্ষুদ্র। কিন্তু এই ক্ষুদ্র ডিভাইসটি প্রথম সুপার কম্পিউটারের তুলনায় অনেক গুণ বেশি কার্যকরী। এভাবেই ধীরে ধীরে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সাথে সাথে হার্ডওয়্যারের ব্যবহার কমে যাবে। সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনগুলোই আরো মূখ্য হয়ে উঠবে।
এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ইত্যাদি সেক্টরের সম্ভাবনার কথা লিখলে হয়তো লেখা শেষ হবে না। কারণ দিন দিন এখান থেকে আরো নতুন নতুন সাব সেক্টর বের হচ্ছে, আর প্রয়োজন হচ্ছে প্রচুর দক্ষ সফটওয়্যার ডেভেলপার। মোটকথা প্রযুক্তির প্রতিটি সেক্টরেই সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনস এর প্রয়োজন দিন দিন বাড়ছে ছাড়া কমছে না। এই শিল্প বিপ্লবটি অনেকাংশেই এই সেক্টরটির উপর নির্ভরশীল। এভাবেই সফটওয়্যার শিল্প বিপ্লব বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প বিপ্লবে পরিণত হচ্ছে।