ঠিক ধরেছেন ফাইভারের কথাই বলা হচ্ছে। শুরুতে পেনি সার্ভিস প্ল্যাটফরম বলা হলেও ২০১২ তে প্রথিষ্ঠা পাওয়ার ২ বছরের মাথায় এর সার্ভিস গিগ ৩মিলিওন ছাড়ায়! আর ২০১৯-এ ১০৭ মিলিয়ন রেভিনিউ নিয়ে বর্তমানে ইউএস এর সেরা ১০০ ওয়েবসাইটের একটি।
আর সেলারদের সাথে সরাসরি সার্ভিস ক্লায়েন্টের যোগাযোগ ঘটানোর মাধ্যমে ফাইভার আজ অনলাইনের অন্যতম সার্ভিস মার্কেটপ্লেস। ফাইভারের প্যাকেজগুলো গিগ নামে পরিচিত। ডেভেলপার, মিউজিশিয়ান, এমনকি লিগ্যাল সার্ভিস সহ রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কয়েক লাখ গিগ। সর্বনিম্ন ৫ ডলার হতে কাস্টম অর্ডারে সার্ভিস চার্জ কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে!
৫ ডলারের জব শুনতে ক্লিশে মনে হলেও এখানে দক্ষ সার্ভিস সেলারদের জন্য নিয়মিত হাজার ডলার উপার্জন খুব স্বাভাবিক। ভাল লোগো ডিজাইন বা চমৎকার ওয়েবসাইট তৈরি করা, বা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যানিং, অর্থাৎ কাজের দক্ষতা এবং অন্যদের চাহিদা আছে এমন যে কোন সার্ভিস আপনি গিগে অফার করতে পারেন। চমৎকার ব্যাপার হল ফাইভার ব্যবহারের এই সুবিধাগুলো আপনি ফ্রিতেই পাবেন। অতিরিক্ত কোন খরচ ছাড়াই!
ফাইভার কেন আলাদা
আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার,কম বা গুরুর মত অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের চেয়ে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ফিভারে কাজের সুবিধা বেশি। প্রতিযোগিতা থাকলেও ফ্লেক্সিবল প্রাইসিং থাকায় সহজে ক্লায়েণ্ট ম্যানেজ করা যায়। আর বড় মার্কেটপ্লেসগুলোর সাথে ফাইভারের বড় পার্থক্য ক্লায়েন্ট এপ্রোচে।
যেমন আপওয়ার্কে কাজ পেতে হলে প্রতিবার নতুন করে বিড, প্রপোজাল পাঠাতে হয়। বাজেট, কাজের সময়, রিকোয়ারমেন্ট ইত্যাদিতে ব্যাটে-বলে মিললে তবেই কাজের সুযোগ।
প্রতিবার গোঁড়া থেকে প্রস্তুতি নেয়ার এই ঝামেলা ফাইভারে নাই।
এখানে প্রথমেই কি সার্ভিস অফার করতে চাচ্ছেন তার পূর্ণ বিবরন সহ গিগ তৈরি করে সাবমিট করতে হয়। এর মধ্যে আছে নির্দিষ্ট বাজেট, টাইমলাইন, এক্সট্রা রিকয়ারমেন্ট ইত্যাদি। এমনকি কি টুলস, টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে তারও উল্লেখ থাকে। ফলে, ক্ল্যায়েণ্ট তার চাহিদামত গিগ বাছাই করে কাজের অর্ডার দিতে পারে। আবার অতিরিক্ত বা স্পেশাল রিকয়ারমেন্ট থাকলে কাস্টম অর্ডার করা যায়। অর্থাৎ সেলারের সাথে এক্সট্রা কমিউনিকেশন ছাড়াই সার্ভিস নেয়ার এই সিস্টেম ফাইভারের ইউনিক ফিচার।
কি করে হবেন সাকসেসফুল ফাইভার ফ্রিল্যান্সার
ফাইভার ছাড়াও অন্যান্য গিগ ইকনমিতে যদি অভিজ্ঞতা থাকে, তবে হাজারো সার্ভিস আর সেলারের তীব্র কম্পিটিশনের সাথে আপনি অনেকটাই পরিচিত। এখানে শুধু লোকাল সেলার বা এজেন্সি নয় বরং ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সারদের সাথে কম্পিটিশন।
তবে প্রতি ৪ সেকেন্ডে যেখানে কোন না কেন গিগ বিক্রি হচ্ছে আর 2.4 মিলিওন রেজিস্টার্ড বায়ার রয়েছে সার্ভিস কেনার জন্য; সেখানে সাকসেসফুল হতে চেষ্টার কোন ত্রুটি না থাকাই উত্তম!
যদিও ফাইভারের প্রসেসে আপনি রীতিমত ঘুমিয়েও সার্ভিস সেল করতে পারবেন! তবে গিগ তৈরি আর বায়ারদের কাছে তুলে ধরার কাজ কিন্তু প্রথমেই রয়েছে। মোটেও জটিল কিছু নয় এবং নিচের সহজ ৫টি ধাপে পাবেন ফাইভারে সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার ইফেক্টিভ স্ট্র্যাটেজি।
তৈরি করুন আকর্ষণীয় গিগ
ঠিকঠাক সার্ভিস গিগ ফাইভারে আপনার সফলতার মূল অস্ত্র। গিগ হতে হবে প্রফেশনাল লুক আর ইউনিক ফিচারের কম্বিনেশন। ফাইভারে গিগ তৈরির ক্ষেত্রেঃ
১) প্রতিযোগীদের নিয়ে রিসার্চ করা
এই পর্যায়ে এসে কি সার্ভিস দিবেন তা ঠিক করা হয়ে গেলে এবার দেখুন আপনার প্রতিযোগী কারা। ফাইভারে যারা ইতিমধ্যে ভাল করছে তাদের রিকমেন্ডেড এবং বেস্ট-সেলার ক্যাটাগরিতে দেখায়। যেসব প্রফাইলের রেটিং, রিভিউ বেশি, সেগুলো ভালমত রিসার্চ করুন।
এখান থেকে আইডিয়া পাবেন কোন ধরনের সার্ভিসের ডিমান্ড বেশি এবং আপনার গিগে কি অফার করবেন। বিশেষত,
i) তারা কিভাবে প্যাকেজ বর্ণনা করছে?
i) এমন কোন সার্ভিস অফার করছে যেটা আপনিও অফার করতে পারেন?
iii) কি কি কিওয়ার্ড ব্যবহার করছে?
২)উপযুক্ত শ্রেণি এবং সাব-ক্যাটাগরি ঠিক করা
গিগ তৈরির সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ক্যাটাগরি ঠিক করা। অনেকেই এখানে নিজের ইচ্ছামত দিতে গিয়ে প্রথম ভুলটা করে। তাই ক্যাটাগরি ঠিক করার আগে রিসার্চ করুন আপনি যে সার্ভিস দিতে চাচ্ছেন তা কোন ক্যাটাগরিতে উপযুক্ত। কিন্তু করবেন কিভাবে?
স্মার্ট সল্যুশন হল, বায়ারের মত চিন্তা করা। ফাইভারে ঢুকুন নেভিগেশন থেকে বায়ার লিংকে ক্লিক করে। এবার টপে থাকা মেনু বাটন ব্যবহার করে খুঁজুন আপনার সার্ভিসের মেইন ক্যাটাগরি। এই লিংকে হোভার করলে দেখতে পারবেন এর সাবমেনু আর সাব-সেকশন। এখান থেকে খুঁজে বের করুন আপনার গিগের পারফেক্ট ক্যাটাগরি।
৩) চমৎকার টাইটেল দেয়া
হাজারো গিগের মধ্যে দ্রুত বাছাই করার সময় বায়াররা বিশেষ করে গিগ টাইটেল খেয়াল করে। সুতরাং বায়ারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ৮০ অক্ষরের গিগ টাইটেল ঠিকমত অপ্টিমাইজ করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া,
i) লেখার সময় এডজেকটিভ, কিওয়ার্ড ব্যবহার করা।
ii) রিলেটেড এডিশনাল সার্ভিস এবং
iii) সার্ভিস ডেলিভারির সময় উল্লেখ করা ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করা।
৪) ফাইভার গিগ প্যাকেজ এবং প্রাইস ঠিক করাঃ
ফাইভার স্পেশালিষ্ট অ্যাডাম ওয়ারনার এর মতে গিগে ৩ ধরনের সার্ভিস প্যাকেজ ব্যবহার করলে তা আপনার আরনিং ৬৪% পর্যন্ত বাড়াতে পারে। সংগতিপূর্ণ গিগ প্যাকেজ তাই র্যাঙ্কিং-এ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিটা গিগ প্যাকেজ বর্ণনার জন্য ১০০ ক্যারেক্টার ব্যবহার করা যায়। তাই বাছাই করে শব্দ ব্যবহার করা ভাল। এবার ক্যাটাগরি অনুযায়ী গিগ অপশন ব্যবহার করতে পারবেন। এর মধ্যে,
i) গ্রাফিক ডিজাইনের গিগ হলে কতগুলো কনসেপ্টে ডিজাইন হবে, রেসোলিউশন কত হবে বা মকআপ কি থ্রি-ডি হবে ইত্যাদি সিলেক্ট করতে পারবেন।
i) কন্টেন্ট মার্কেটিং হলে মার্কেটিং একশন প্ল্যান, কন্টেন্ট শেয়ারিং, এডিশনাল কনটেন্ট অপটিমাইজেশন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন।
iii)অফারভেদে প্রতিটি প্যাকেজের মূল্য ৫ থেকে ৯৯৫ ডলার পর্যন্ত দিতে পারবেন। এছাড়া কাস্টম অর্ডার হলে প্রাইসিং আরো বাড়াতে পারবেন।
ব্যবহার করুন গিগ ডেসক্রিপশন
এবার পালা সংক্ষিপ্ত এবং সহজবোধ্য গিগ ডেসক্রিপশন তৈরির। যদিও এখানে ক্যারেক্টার লিমিটের ঝামেলা পোহাতে হয়না কিন্তু চেষ্টা করবেন ডেসক্রিপশন যেন আকর্ষণীয় এবং বায়ারদের জন্য আই-ক্যাচিং হয়। এছাড়া গিগের বর্ণনায় নিচের বিষয়গুলো থাকা প্রয়োজন,
i) গতানুগতিক সার্ভিসের বাইরে ইউনিক কি অফার দিচ্ছেন এবং বায়ারদের তা কিভাবে সাহায্য করবে তার বর্ণনা।
i) আপনার বিশেষত্ব কি অর্থাৎ আপনার সার্ভিস কেন নেয়া উচিত তা সংক্ষেপে তুলে ধরা।
iii) আপনার সার্ভিসে কি কি ইনক্লুড (include) আছে তার বিস্তারিত বিবরণ
iv) গিগ ডেসক্রিপশনে পোর্টফলিও, লিঙ্কেদিন(LinkedIn), বিহ্যান্স, বা ড্রিবলসহ অন্যান্য প্রফেশনাল সাইটের লিঙ্ক অন্তর্ভুক্ত করা।
সবশেষে, আপনার গিগকে প্রফেশনাল লুক দেয়ার জন্য ব্যবহার করুন FAQ সেকশন। এটা বিশেষ করে টেকনিক্যাল সার্ভিসের ক্ষেত্রে কাজে দেয়। আপনি যদি ডেভেলপার হয়ে থাকেন তবে কোন সার্ভার টেকনোলজি ব্যবহার করছেন, বা ক্লায়েন্টের চাহিদামত ল্যাঙ্গুয়েজে কাজ করতে পারবেন কিনা ইত্যাদি এবং সার্ভিস রিলেটেড কমন প্রশ্নোত্তরের জন্য এই সেকশন সাজাবেন।
প্রফেশনাল ইমেজ, ভিডিও এবং ভিজুয়ালসের ব্যবহার
ইন্টারনেটে এখন মাল্টিমিডিয়ার রাজত্ব। ফাইভারও এর ব্যাতিক্রম কিছু নয়। সম্প্রতি দেখা গেছে গিগে ভিডিও ব্যবহার করলে তা ২০০% পর্যন্ত ভিজিবিলিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
যদিও গিগ ভিডিও মাত্র ৭৫ সেকেন্ডের, তাই প্রতিটা সেকেন্ড কাজে লাগান। ইমেজ, ভিডিওর ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো জরুরী-
i) ক্যামেরায় ন্যাচারাল লাইট ব্যবহার করা
ii) প্রফেশনাল এটিটিউড বজায় রাখা
সবশেষে বলা যায়, যে কোন ক্ষেত্রেই স্কিল্ড এবং পেশাদার হলে সফলতা নাগালেই থাকে। ফাইভার ও এর ব্যাতিক্রম নয়। ভাল কাজের দক্ষতা আর রুলস, রেগুলেশন ঠিকঠাক ফলো করার মানসিকতা থাকলে খুব দ্রুতই আপনিও হয়ে উঠবেন ফাইভারে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।