গ্রামের সহজ সরল ছেলে যে কিনা কম্পিউটারের ক জানত না আজ সে নিজের সাথে সাথে অনেক ছেলেমেয়ে কে IT সেক্টরে সংযুক্ত করতে চায় । যিনি চান শহরের ছেলেমেয়েদের মতো জেলা বা উপজেলা সদরের ছেলেমেয়েরাও যেন IT সেক্টরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে । তাই তিনি তার জন্মস্থানে ইনফরমেশন টেকনোলজি স্কুল গোড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন । নিপু নন্দ বিশ্বাস, যিনি একজন সফল ফ্রিলান্সার । টাইপিং, ডাটা এন্ট্রি দিয়ে কাজ শুরু করলে ও বর্তমানে তিনি এডমিন সাপোর্ট এবং লিড জেনারেশন রিলেটেড কাজ করছেন । বাবা, যার অন্য নাম আস্থা । বাবাই ছিল তার কাজের অনুপ্রেরনা ,সাপোর্ট । চারপাশ থেকে সবাই যখন তাকে হতাশার বাণী শুনিয়েছেন তখন তার বাবা ই একমাত্র সাপোর্ট করেছেন । আমরা তার ফ্রিলান্সিং জার্নির কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আপনাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ।
ফ্রিল্যান্সিং কারিয়ারের পথচলার গল্প
“২০০৯ সালের আগে আমি কম্পিউটারের ক ও জানতাম না। সে বছর এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর অলস সময় পার করছিলাম। বাজারে আমাদের একটা কম্পিউটার/ফটোকপির দোকান ছিল। সেখান থেকেই মূলত আমার কম্পিউটারে হাতে খড়ি হয়। অফিস প্রোগ্রাম শিখতে থাকলাম আর মাঝে মাঝে দোকানের কাজে সাহায্যও করতাম। তখনো ইন্টারনেট ভাল বুঝতাম না। তবে এসএসসির ফলাফল প্রকাশের দিন ইন্টারনেট নিয়ে নতুন কৌতুহল শুরু হলো। লেগে গেলাম ইন্টারনেট নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে। জানতে পারলাম নতুন নতুন অনেক বিষয় নিয়ে। ২০১১ সালের দিকে জানতে পারলাম ইন্টারনেট থেকে আয় করা যায়। কিন্তু কিভাবে আয় করা যায় তা জানতাম না। তখন আবার এইটা নিয়ে প্রচুর রিসার্চ শুরু করে দিলাম। এক এক করে জানতে পারি ওডেস্ক, ইল্যান্স, ফ্রিল্যান্সার নামক মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে। জানতে পারি এখান থেকে কিভাবে আয় করা যায়, এইসব মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজের আদান প্রদান হয়, কিভাবে আয়ের টাকা নিজের হাতে পাওয়া যায় সহ আরো অনেক তথ্য। আমার কখনো কোনো মেন্টর ছিলো না এইসব বিষয়ে। তাই নিজে থেকেই রিসার্চ করে সব কিছু জানতে এবং শিখতে হয়েছে। আর তখন ইন্টারনেটের অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারনে এসব বিষয় নিয়ে রিসার্চ করতে অনেক সময় লেগেছে।অবশেষে ২০১৩ সালের ০৪ সেপ্টেম্বর ওডেস্ক (বর্তমান আপওয়ার্ক) মার্কেটপ্লেসে একটি অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করি। প্রথম কাজ পেতে আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো প্রায় ৩ মাস। অবশেষে ২১ নভেম্বর প্রথম প্রজেক্টটি পাই। তবে তার ভ্যালু ছিলো খুবই কম। ফ্রিল্যান্সিং শুরুর প্রথম বছর আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় বছর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।”
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে যেসকল কাজ করেছেন বা করছেন
“যেহেতু গ্রামে থাকতাম সেহেতু অফিস প্রোগ্রাম ছাড়া তেমন কিছু শিখতে পারিনি। তাছাড়া দুর্বল নেটের কারনে নিজে থেকে চেষ্টা করেও অন্য কোনো প্রোগ্রাম বা তার টিউটোরিয়াল দেখতে পারিনি। সেই সময়ে ইউটিউবের কথা তো চিন্তাই করা যেত না। তাই যেটা পারতাম সেটা দিয়েই শুরু করি। আমি কিছু না পারলেও খুব ফাস্ট বাংলা এবং ইংরেজি টাইপিং জানতাম। টাইপিং, ডাটা এন্ট্রি, লাইট রিসার্চ এগুলো দিয়েই শুরু করি। পরে যখন থ্রিজি আসে তখন ফুল রিসার্চের দিকে মনোনিবেশ করি। সকল ধরনের ডিপ রিসার্চ করতাম যার ভ্যালু অনেক ভালো ছিল।বর্তমানে আমি অ্যাডমিন সাপোর্ট এবং লিড জেনারেশন রিলেটেড কাজ করি।”
কেন ফ্রিল্যান্সিং করছেন
“বাংলাদেশ স্কেলে মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা। বাবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। বাবার বেতন, চাষের জমি এবং পুকুর থেকে যা আসতো তাতে আমাদের মোটামুটি ভালভাবেই চলে যেতো। তবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছিলো না। ২০১৩ সালে বাবা অবসরে যান। তখন থেকেই বড় আয়ের মাধ্যম খুজছিলাম তবে অবশ্যই সেটা সৎ হতে হবে। সাধারন চাকরি করে হয়তো বা পরিবারের খরচ চালানো যেতো কিন্তু সেটা হতো দিন এনে দিন খাওয়ার মত। বড় আয়ের জন্য বিদেশ যেতে হবে নয়তো বড় ব্যবসা করতে হবে। যার কোনোটাই আমার জন্য সম্ভব ছিল না। তবে বুঝতে শুরু করলাম ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এ ট্রেডিশনাল অফিসের মত সকাল সন্ধ্যা ডিউটি করতে হয় না, বসের কড়া শাসনে পরতে হয় না, ছুটির জন্য অনুনয় বিনয় করতে হয় না, নির্দিষ্ট একটা স্কিল বা পজিশন নিয়ে বসে থাকতে হয় না। ফ্রিল্যান্সিং এ আয়, স্কিল, কাজ সব কিছুই এক কথায় ইনফিনিটি। অনেক ফ্রিল্যান্সারই বলবে ফ্রিল্যান্সিং মুক্ত পেশা তাই ফ্রিল্যান্সিং এ এসেছি। কিন্তু আমার ফ্রিল্যান্সার হওয়ার প্রধান কারন সৎ পথে অধিক আয়।”
আপনার জার্নি টা কেমন ছিল
“প্রথম যখন ইন্টারনেট নিয়ে রিসার্চ শুরু করি তখন গ্রামে ইন্টারনেট সহজলভ্য ছিল না। একে তো খারাপ নেট স্পিড অন্যদিকে ব্যয়বহুল। তবে রাত ১০ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত স্বল্পমূল্যের প্যাকেজ চালু ছিল। তাই খরচ কমাতে প্রতিদিন ভোর ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে সকাল ৯ টা পর্যন্ত একটানা শুধু রিসার্চ করতাম আর নতুন নতুন বিষয় শিখতাম। প্রথম যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি তখন আমার কোনো পার্সোনাল কম্পিউটার ছিল না। যেহেতু আমাদের একটা দোকান ছিল, সেখানে বসেই শিখতাম পাশাপাশি দোকানের কাজেও সাহায্য করতাম। তবে যখন মার্কেটপ্লেসে প্রথম কাজ পাই তখন দোকানের বিজনেস আওয়ারে কাজ করা যেতো না, কারন তাতে দোকানের জন্য অসুবিধা হতো। রাতে পিসি বাসায় নিয়ে গিয়ে কাজ করতাম আর সকালে আবার পিসি দোকানে দিয়ে আসতাম। মজার বিষয় হলো তখন আমার কম্পিউটার টেবিলও ছিল না। পড়ার টেবিলে কম্পিউটার বসানোর উপায়ও ছিল না যেহেতু কম্পিউটারটা ছিল শুধু রাতের জন্য ভ্রাম্যমান। তাই মেঝের উপর আসন পেতে বসতাম আর সামনে একটি ট্রাংক রেখে তার উপর মনিটর, মাউস, কিবোর্ড রেখে কাজ করতাম। বাসার সবাই এগুলো দেখে হাসাহাসি করতো।যেহেতু তখন ইন্টারনেটের অবস্থা খুব খারাপ ছিল তাই বড় কোনো প্রজেক্টের জন্য আবেদন করতে সাহস পেতাম না, কারন যদি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারি তাহলে আমার প্রোফাইলে খুব খারাপ প্রভাব পরবে। ইন্টারনেট এতটাই খারাপ ছিল যে, ব্রাউজারে একটি ওয়েবসাইট সম্পুর্ন ওপেন হতে ৫-১০ মিনিট সময় লাগতো। সারা সপ্তাহ পরিশ্রম করে ৫ ডলার আয় করতেও অনেক কষ্ট হতো। পরিবারের অনেকে তখন নিরুৎসাহিত করতে থাকে যে, এই কাজ করে জীবনে কিছু হবে না, এগুলো বাদ দিয়ে পড়াশুনা কর, চাকরি কর।প্রতিবেশি আর বন্ধুরা ছিল এক কাঠি উপরে। তারা বেশিরভাগ সময়ে এগুলো নিয়ে হাসাহাসি করতো, টিটকারি দিয়ে কথা বলতো। কেউ কেউ উপহাস করে মিলিয়নিয়ার নামে ডাকতো।এগুলো কানে না নিয়ে আমি আমার মত করে চালিয়ে যেতে থাকি এই আশায়, যে ভাল কিছু একটা হবে। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি প্রথম টাকা উত্তোলন করতে পারি। সেই টাকা দিয়ে প্রথমেই একটি ভাল কম্পিউটার এবং ডেস্ক কিনে ফেলি। আর এখন আমার অনেকগুলো কম্পিউটার।”
বাবা-ই ছিলো তার কাজের অনুপ্রেরণা
“সবাই নিরুৎসাহিত করলেও এই একটা মানুষ যিনি কখনো নিরুৎসাহিত করেননি। তিনি আমার বাবা । বাবা আগে থেকেই আইটি বিষয়ক তথ্যগুলো নিয়ে ভাবতেন, কথা বলতেন। টিভিতে যখন ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কোনো প্রোগ্রাম হতো তখন আমাকে বলতেন দেখতে। সবাই যখন ফ্রিল্যান্সিং বাদ দিতে বলতো তখন বাবা আরো চেষ্টা করতে বলতেন।”
কাজের জন্য কোন মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করছেন?
“বর্তমানে আমি শুধু আপওয়ার্কে কাজ করি।আসলে অন্য মার্কেটপ্লেসে আমার কাজ করা হয় নি এখন কারন আমি আপওয়ার্কে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি তাই অন্য কোথাও আর ত্র্য করা হয় নি । তবে এখন অন্য মার্কেটপ্লেসে কাজ করারও প্লান আছে।”
ফ্রিল্যান্সিং এর কোন দিকটা আপনাকে আকর্ষিত করে?
“ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা মাধ্যম যেটা একদিকে চাকরি আবার চাকরি নয়, একদিকে ব্যবসা আবার ব্যবসা নয়। চাকরির মত সীমাবদ্ধ আয়ের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হয় না। আবার ব্যবসার মত ইনভেস্টও করতে হয় না। স্কিল এবং ধৈর্য হলো ফ্রিল্যান্সিং এর কাঁচামাল। চাকরিতে যেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিগত অভিজ্ঞতা এবং ডার্কসাইডে ব্যাকপাওয়ার দরকার হয়, ফ্রিল্যান্সিং এ সেখানে শুধু স্কিলের দরকার হয়। এই জিনিসটা আমাকে খুব আকর্ষন করেছে।”
দক্ষতা বিকাশের জন্য কিভাবে কাজ করছেন?
“বর্তমানে ক্লাইন্টদের রেগুলার কাজ নিয়ে প্রচুর ব্যস্ততা। তাই আলাদাভাবে স্কিল ডেভেলপমেন্টের কোনো সুযোগ নেই। তবে কাজের মধ্যে অনেক নতুনত্ব থাকে, তখন সেগুলো নিজে থেকে শিখতে হয়। আমি অ্যাডমিন সাপোর্ট এবং লিড জেনারেশনের কাজ করলেও এইসব কাজের মধ্যেও মাঝে মাঝে কিছু ভিন্ন স্কিল দরকার হয়। যেগুলো আমি কাজের মধ্যেই শিখে ফেলি। এখনও শিখছি। যেমন লিড জেনারেশনের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে তাদের প্রত্যেকের ফটো রিটাচ করতে হয়। সাইট স্ক্র্যাপিং করার জন্য মাঝে মাঝে কোডিং নিয়ে রিসার্চ করতে হয়। আমি এক সময় ওয়েব ডিজাইনের কিছুই জানতাম না। এখন কাজের প্রয়োজনীয়তায় ব্যাসিক ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে হয়েছে। এভাবেই কাজের মধ্যেই নিজের স্কিল ডেভেলপ করছি।”
ফ্রিল্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ দিকটি কী?
“একটা সময় ভাবতাম ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ মুক্ত পেশা। তবে পারিবারিক এবং পেশাগত ভাবে একজন দায়িত্বশীল ফ্রিল্যান্সারের জন্য এই সংজ্ঞা সঠিক নয়। ফ্রিল্যান্সিং এ এসে নিজেকে বন্দী করে ফেলতে হয়। প্রচুর চাপ নিতে হয়। কমিটমেন্ট এবং সময়স্বল্পতা অনেক সময় খুবই পীড়াদায়ক। চাকরিতে ডিউটি থাকে মাত্র ৮ ঘন্টা। তারপর মুক্ত। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং এ ডিউটি ২৪ ঘন্টা, তার মধ্যে বিশ্রাম/ঘুমের সময়টা নিজে থেকে বের করে নিতে হয়। এছাড়া লম্বা সময় বসে থাকার কারনে স্বাস্থ্য ঝুকি তো আছেই। মূলত এগুলোই হলো ফ্রিল্যান্সিং এর খারাপ দিক।”
ফ্রিল্যান্সিং এ সবচেয়ে ভালো দিক কোন টা?
“চাকরিতে নির্দিষ্ট পরিমান বোনাস আসে রিলিজিয়াস অকেশনে। আর ফ্রিল্যান্সিং এ বোনাস আসে অসাধারন পারফর্ম করলে। তাছাড়া একজন ফ্রিল্যান্সার তার পছন্দমত কাজের সময় এবং কাজের মূল্য ক্লাইন্টের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারন করতে পারে। সব থেকে মজার বিষয় হলো বাংলাদেশে বসে আমেরিকান বা ইউরোপিয়ান সিটিজেনদের সমান আয় করা যায় এবং বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন টাইম জোনের ক্লাইন্টদের সাথে পরিচিত হওয়া, তাদের কালচার সম্পর্কে জানা, মোট কথা বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায় ঘরে বসেই। বর্তমানে বাংলাদেশে সি-লেভেল, ভিপি-লেভেল ছাড়া লাখ টাকা বেতন কল্পনাও করা যায়না। কিন্তু একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম শুধু মাত্র স্কিল ব্যবহার করে। বাংলাদেশে বসে ফ্রিল্যান্সিং ই একমাত্র আয়ের মাধ্যম যেটা ১০০% স্কিলের উপর নির্ভরশীল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে স্কিল ছাড়া চাকুরি করা যায় কিন্তু স্কিল ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং কল্পনাও করা যায় না। এই বিষয়টা আমার কাছে সবথেকে বেশি ভাল লাগে।”
ক্লায়েন্টের পজিটিভ থিঙ্কিং পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপায়
১। কমিউনিকেশন: আপনি যত ভাল মানুষ হন আপনার মুখের ভাষা, কথা বলার ভঙ্গিমা, ব্যবহার যদি ভাল না হয় তাহলে কেউ আপনাকে পছন্দ করবে না এবং আপনার সম্পর্কে খারাপ মনোভাব তৈরি হবে। একজন ক্লাইন্টকে খুশি রাখার প্রথম ধাপ হলো ফ্লেক্সিবল কমিউনিকেশন। অনেক স্কিল থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র কমিউনিকেশন গ্যাপের জন্য অনেকেই ঝরে পরে। শুধু ক্লাইন্টের জন্যই নয় ক্যারিয়ার স্ট্রং করতেও ভাল কমিউনিকেশন জানতে হবে।
২। বেস্ট আউটপুট: ক্লাইন্টের সাথে জমিয়ে গল্প করলেন কিন্তু কাজের বেলায় শূন্য বা মোটামুটি। তাতে প্রথম অবস্থায় ক্লাইন্ট খুশি থাকলেও শেষে এসে আর খুশি থাকবে না। ক্লাইন্টকে সবসময় সর্বোচ্চটা দিতে হবে। কে বলতে পারে আপনার ওই কাজটি ব্যবহার করেই ক্লাইন্টের মিলিয়ন ডলারের বিজনেস চলবে। সেখানে কোনো সমস্যা থাকলে বা আউটপুট খারাপ হলে ক্লাইন্টের বিজনেসে ক্ষতি হতে পারে। তাই কাজের কোয়ালিটি নিয়ে নো কম্প্রোমাইজ।
৩। কমিটমেন্ট: সাধারন জীবনের সাধারন কমিটমেন্ট আর ক্লাইন্টের কাছে দেয়া কমিটমেন্ট এক নয়। ক্লাইন্টের সাথে করা কমিটমেন্ট অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। সেটা হতে পারে কাজের পরিমান বা কাজের সময়সীমা নিয়ে। আপনি যদি একটি কাজের জন্য ক্লাইন্টের থেকে ৭ দিন সময় নিয়ে থাকেন অবশ্যই চেষ্টা করবেন অন্তত ১ দিন আগে শেষ করার। হতে পারে সপ্তম দিনেই আপনার কাজটি ক্লাইন্ট কাজে লাগাবে। আপনি একদিন দেরি করে অষ্টম দিনে কাজ জমা দিলে হয়তো ওই কাজটা ক্লাইন্টের কোনো কাজে আসবে না। আমাদের সময়ের থেকে ক্লাইন্টের সময়ের দাম অনেক বেশি। সব ক্লাইন্টই এই কমিটমেন্ট এর ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। একজন ফ্রিল্যান্সারকে আরো বেশি সিরিয়াস হতে হবে।
নতুনদের জন্য কোন টিপস?
“সবাই টাকা আয়ের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এ আসে। কিন্তু টাকার লোভে পরে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং এ আসা উচিত না। বর্তমানে দেখা যায় বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরা অন্যের আয় দেখে লোভে পরে ফ্রিল্যান্সিং এ আসে। এক্ষেত্রে ৯০% প্রথম ধাক্কায় ঝরে পরবে। বাকি ১০% হয়তো কাকতালীয় ভাবে কিছু আয় করে ফেলবে। কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। স্কিলফুলদের ভীরে একদিন এরা হারিয়ে যায়। তাই ফ্রিল্যান্সিং এ আসার আগে নতুনদের উদ্দেশ্যে তার অভিমত:
আগে পড়াশুনা ভালভাবে শেষ করুন। তারপর চিন্তা করুন কি করবেন। যদি ফ্রিল্যান্সিংই আপনার মূল লক্ষ্য হয় তাহলে মাঠে নেমে পড়ুুন। প্রথম কাজ হলো নিজেকে সেট করা, আপনি কোন বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী। অবশ্যই সবাই যা করে সেটা করবেন না। যেটা সবাই করে না সেটা করবেন। একই সাথে আপনার একাডেমিক সাবজেক্ট কি ছিল সেই রিলেটেড সেক্টর নিয়ে আগাতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি আর্কিটেক্সার নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। এক্ষেত্রে আমি বলবো আর্কিটেক্সার নিয়ে কাজ করলে ফ্রিল্যান্সিং এ সব থেকে বেশি লাভবান হবেন। নিজের উদ্যোগে স্ট্রং পোর্টফোলিও তৈরি করুন। যখন মনে হবে আপনার পোর্টফোলিও ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের, ঠিক তখনই ফ্রিল্যান্সিং এ আগাবেন। সবারই একটা বিষয় মনে রাখা উচিত ফ্রিল্যান্সিং শুধু মাত্র ডলার আয় নয়। আমাদের দেশের স্কিল উন্নত দেশের সামনে প্রদর্শন করা। একজন ক্লাইন্ট আপনার থেকে খারাপ অভিজ্ঞতা হলে বাংলাদেশ নিয়ে তার একটা নেতিবাচক ধারনা তৈরি হবে। তাই আয়ের পাশাপাশি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য কমপ্লিট স্কিলসেট নিয়ে প্রফেশনালি অগ্রসর হতে হবে।”
আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
“যা হওয়ার তা শহরে বিশেষ করে ঢাকা শহরে হয়। গ্রামে বা অন্য জেলা গুলোতে তেমন কিছুই হয় না। বাংলাদেশের সিংহভাগ ফ্রিল্যান্সারই ঢাকা শহরে থেকে কাজ করে এবং সেখানেই বিভিন্ন আইটি ফার্ম গড়ে উঠেছে। কিন্তু জেলা বা উপজেলা সদরগুলো এখনও অন্ধকারে। আমার ইচ্ছা আমার নিজ জেলা বরিশালে একটি আইটি ফার্ম করার যেখানে কাজ করবে শুধু গ্রামের বেকার যুবকরা। বর্তমানে একটি ছোট টিম নিয়ে কাজ করছি। জনবল বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে সুদূর ভবিষ্যতের একটি প্লান হলো এখানে একটি “ইনফরমেশন টেকনোলজি স্কুল” গড়ে তোলার। যেখানে সাধারন স্কুল কলেজ থেকে ঝরে পরা ছেলেমেয়েদের এবং আইটিতে আগ্রহীদের পাঠদান করা হবে। এটা বর্তমানের সাধারন ট্রেনিং সেন্টারের মত হবে না। বিদ্যালয়ের মত হবে তবে পাঠ্য বিষয়গুলো হবে ৯০% আইটি সম্পর্কিত। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের যুগে সাধারন শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষায় পাস করা ছাড়া তেমন কোনো কাজে আসবে না। এক্ষেত্রে দরকার আইটি শিক্ষা, যে বিষয়ে গ্রামের ছেলেমেয়েরা এখনো অনেকটাই অজ্ঞ। এখান থেকেই আমার এই ভবিষ্যত পরিকল্পনা।”