আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন নিয়ে মাহফুজ আলম ২০১৪ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং খাতে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার নিয়ন্ত্রণে একটি ছোট টিম বৈশ্বিক বাজারে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সাপোর্ট নিয়ে কাজ করছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবদান এর পাশাপাশি দক্ষ জনবল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন।

ক্যারিয়ারের শুরু

২০১৪ সালে মাহফুজ আলম ফ্রিল্যান্সিং এর ক্যারিয়ার শুরু করেন। তার এক বড় ভাই তাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য তৈরি হবার ক্ষেত্রে মাহফুজ আলমের ইউটিউব এবং গুগল থেকে অনেক বিষয় শিখতে হয়েছে। এভাবে ধীরে ধীরে দক্ষতা বাড়িয়ে তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজারে তার ক্যারিয়ার গড়তে শুরু করেন।

মাহফুজ আলম এর কাজ

অনলাইন ও বৈদেশিক নানান প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশাসনিক কাঠামো সংশ্লিষ্ট কাজে মাহফুজ আলম পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এডমিন সাপোর্ট নিয়ে কাজ করে থাকেন। এছাড়া ডাটা মাইনিং ও ওয়েব রিসার্চসহ অন্যান্য কাজে তার দক্ষতা রয়েছে। দিনে দিনে এই কাজে তার দক্ষতা এবং বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তিনি একটি ছোট টিমের মাধ্যমে তার কাজগুলো পরিচালনা করেন। ক্লায়েন্টরা মূলত অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজগুলোতে মাহফুজ ও তার টিমকে বিভিন্ন প্রজেক্ট দেন। আপওয়ার্ক ও ফিভারের মাধ্যমে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে মাহফুজের যোগাযোগ হয়।

এই কাজে একজন ফ্রিল্যান্সারের যা দক্ষতা প্রয়োজন

ফ্রিল্যান্সিং এর যে কোন ক্ষেত্রে দক্ষতা একটি বড় বিষয় এবং যোগ্যতার প্রধান মাপকাঠি। এডমিন সাপোর্টের এই ক্ষেত্রে দক্ষতা বিষয়ে মাহফুজ আমাদের বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই এলাকাতে কাজ করতে আপনার ভালো যোগাযোগ দক্ষতা, প্রশাসনিক দক্ষতা ডাটা মাইনিং দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধান করার মানসিকতা থাকতে হবে। কাজগুলোতে অনেক সময় আপনাকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হতে পারে কিন্তু ধৈর্য হারালে চলবে না। কারণ নো পেইন নো গেইন।’

ফ্রিল্যান্সিং কেন

মাহফুজ আলমের দৃষ্টিতে ফ্রিল্যান্সিং একটি চমৎকার এবং আকর্ষণীয় পেশা। সাধারণত অন্যান্য পেশাগত জায়গাগুলোতে উন্নতি করতে মানুষের জীবনের অর্ধেকটাই ব্যয় হয়ে যায়। অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাজারে খুব অল্প সময়ে মানুষ দ্রুত উন্নতি করতে পারে। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ স্বাধীনতা আছে তা অন্য পেশায় নেই। মাহফুজ বলেন, ‘আমি আমার ইচ্ছা মতো সময় এবং কাজের সমন্বয় করতে পারি। আমি চাকরি করলে এটি সম্ভব হতো না আর ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার সীমা নেই। আমি ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসা নিয়ে কাজ করতে পারি এবং আমার স্বপ্ন বাস্তব করতে পারি। তাই ফ্রিল্যান্সিংই সবচেয়ে সেরা পেশা।’

মাহফুজের সংগ্রাম ও পথচলা

সফলতার কোন ক্ষেত্রেই পরিশ্রম এবং সংগ্রাম ছাড়া কেউ সফল হতে পারেনা। মাহফুজ আলমও জগতের এই চিরন্তন নিয়মের ব্যতিক্রম নন। তিনি তার শুরুর দিনের কঠিন দিনগুলো বিষয়ে আমাদের জানান। তিনি বলেন, শুরুর দিকে আমার বেশ কষ্ট করতে হত। আমার ল্যাপটপের সক্ষমতা ছিল খুব কম এবং দুর্বল এই ল্যাপটপটি নিয়ে আমাকে বেশি হিমশিম খেতে হতো। তাই ওডেস্ক বা অন্যান্য সাইটে কাজ করতে গেলে আমি অনেক সময় কাজ নিতে পারতাম না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। আমি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় শিখতাম। আর এভাবে অনেকটা সময় চালিয়ে যাবার পর শেষ পর্যন্ত আমি কিছু ছোট ছোট প্রজেক্ট পাই।‘

শুরুর দিকে দুই এক বছর মাহফুজ পার্ট টাইম হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু এরপর বাজারে যথেষ্ট পরিমাণ সাড়া পাওয়ার পর তিনি ফুলটাইম পেশাদার ফ্রিল্যান্সার হয়ে যান।

মাহফুজ আলমের অনুপ্রেরণা

২০১৪ সালে আমি যখন কাজ শুরু করি তখন থেকেই আমি বিভিন্ন জায়গায়, পত্রিকায়, গুগল বা অন্যান্য প্লাটফর্মে ফ্রিল্যান্সিং এর কথা শুনি। সেখানে অনেক ফ্রিল্যান্সারের সফলতার গল্প, তাদের সংগ্রামের গল্প আমার সামনে আসে। তাদের সেসব গল্প, তাদের সংগ্রাম আমাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে এবং আমি ফ্রিল্যান্সার হবার চিন্তাভাবনা শুরু করি। এই সফল ফ্রিল্যান্সারদের আলাদা আলাদা ভাবে নাম বলা সম্ভব না। কিন্তু তারা আমাকে সফল হতে দূর থেকেই উজ্জীবিত করেছেন।

এছাড়া এই পেশার স্বাধীনতার বিষয়টিও আমাকে বহুলাংশে আকর্ষিত করে রেখেছে।

মার্কেটপ্লেস এবং মাহফুজ আলমের কাজ

মাহফুজ আলম তার কাজের শুরুতে ওডেস্কে কাজ করতেন। কিন্তু কয়েক বছর পরে ওডেস্ক এবং ইল্যান্স মিলে গিয়ে আপওয়ার্ক নামে নতুন একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়। মাহফুজের পরিচিত কিছু ক্লায়েন্ট আগে থেকেই ওডেস্কে তাকে কাজ দিতেন। তারাই পরে আপওয়ার্কে মাহফুজকে কাজ দেন। আপওয়ার্ক তৈরি হবার পর মাহফুজের বাজার চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ে। বর্তমানে মাহফুজ তার টিম সাথে নিয়ে মূলত আপওয়ার্ক ডট কমেই কাজ করছেন।ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট করতে মাহফুজের পরামর্শ

সেবাপ্রদানের এই খাতে ক্লায়েন্টকে খুশি রাখা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং কোন চাকরি না তাই কেবল ক্লায়েন্টকে খুশি রাখতে পারলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সাফল্য প্রায় নিশ্চিত করা সম্ভব। ক্লায়েন্টকে খুশি করতে সবচেয়ে জরুরি হলো কাজের মান। উচ্চমানের কাজ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। দ্বিতীয়তঃ সময় ব্যবস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডেডলাইন এর মধ্যেই অবশ্যই ক্লায়েন্টকে কাজ জমা দেওয়া উচিত। তা না হলে ক্লায়েন্ট দ্বিতীয়বার কাজ দিতে ইচ্ছুক হয় না। ক্লায়েন্ট ধরে রাখতে কমিউনিকেশন স্কিল থাকা খুব জরুরী। এই কমিউনিকেশন স্কিল দিয়ে ক্লায়েন্টের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

নতুনদের জন্য মাহফুজের পরামর্শ

নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিং এ আসেন তারা খুবই উৎসাহী থাকেন। এ উৎসাহ ও উত্তেজনার ফলে তারা তাদের পোর্টফোলিও তৈরি করতে গিয়ে তাড়াহুড়া করেন। কিন্তু এটি মারাত্মক ভুল। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে নিজের প্রোফাইল তৈরি করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। প্রোফাইলগুলি যত্ন নিয়ে তৈরি করলে তা ক্লায়েন্টের নজর কাড়ে। যতটা সম্ভব বিস্তারিত লেখা উচিত প্রোফাইলে। এবং সব সময় ভাবা উচিত যে আমি নিজে ক্লায়েন্ট হলে একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রোফাইলে কি কি দেখলে সেই ফ্রিল্যান্সারকে যোগ্য মনে করতাম। ক্লায়েন্টের চোখ দিয়ে নিজেকে দেখা শিখতে হবে। সেলফি কখনো প্রোফাইলে দেওয়া উচিত না। আচরণে পেশাদারিত্ব থাকতে হবে। আর যে দক্ষতা আপনার নেই তা কোনোভাবেই প্রোফাইলে লেখা উচিত না। 

নতুন ক্লায়েন্ট খোঁজার ক্ষেত্রে দৈনিক সাপ্তাহিক ভাবে নতুন প্রজেক্ট খুঁজতে বসা উচিত। নতুন কাজ খোঁজার সময় ক্লায়েন্টের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। ক্লাইন্টকে আপনার কর্মপরিকল্পনা বললে আপনার প্রতি ক্লায়েন্টের বিশ্বাস বাড়ে।

তৃতীয়তঃ আপনাকে প্রডাক্টিভ হতে হবে। সব সময় চেষ্টা রাখবেন যেন ডেডলাইন এর আগে কাজ জমা দেওয়া যায়। আপনাকে নিজেকে চেনা শিখতে হবে যে কোন কাজে আপনি সবচাইতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর কাজগুলো করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

খুব অল্প থেকে সংগ্রাম চালিয়ে মাহফুজ আলম আজকের এই স্থানে পৌঁছেছেন। তার পথটা সহজ ছিল না। কিন্তু সহজ পথে সফলতা পাবার কোন সুযোগ নেই। মাহফুজ মনে করেন যে বাংলাদেশের বর্তমান চাকরির বাজার ও তরুণদের অবস্থা বিবেচনায় ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হাতের ব্যাপক সুযোগ আছে। তিনি আশা করেন আগামী কয়েকবছরে বাংলাদেশি তরুণরা আরো দ্বিগুণ পরিমাণে ফ্রিল্যান্সিং বাজারে প্রবেশ করেবন। মাহফুজের দেওয়া পরামর্শগুলো ফ্রিল্যান্সিং এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আগত নতুনদের ধারণাকে আরও স্পষ্ট করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।