আমাকে দিয়ে কিছু হবে না , আমার দ্বারা কিছু সম্ভব না , প্রকৃতপক্ষে একথাগুলোর কোন মূল্য নেই । প্রকৃতপক্ষে চেষ্টা করলে পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা মানুষ দ্বারা সম্ভব নয়। সম্ভব বলেই তো আমরা কম্পিউটার পেয়েছি , মোবাইল পেয়েছি , আকাশ পথে উড়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারছি । ঘরে বসে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি । কম্পিউটারের সামান্য বাটন প্রেস করে পুরো পৃথিবীর কোথায় কি আছে তা জেনে নিতে পারছি । এমন কি ঘরে বসেই ব্যবসা বাণিজ্য সব করে ফেলছি। আমরা সবাই জানি বর্তমানে ঘরে বসে পেশাদারী কাজ করা যায় যাকে আমরা ফ্রিলান্সিং বলে থাকি । আমরা আজকে এমনি একজন ফ্রিলান্সার জনাব বুলবুল আহমেদের সাথে কথা বলব । যিনি স্টুডেন্ট লাইফের পাশাপাশি ফ্রিলান্সিং শুরু করেছিলেন । গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটি কোর্সের মাধ্যমে তার ফ্রিলান্সিং লাইফের শুরু হয় । তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের ফটো এডিটিং এবং রিটাচিং এর ওপর কাজ করে থাকেন । ২০১৫ সাল থেকে তার এই জার্নি শুরু হয় । আমরা আজকে তার এই জার্নি সম্পর্কে কিছু জেনেছি তা আপনাদের সাথে আমরা শেয়ার করেছি সংক্ষিপ্ত আকারে ..
“প্রথম ২০১৩ সালে আমি আমার এক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে আপ-ওয়ার্ক প্লাটফর্মের কথা শুনেছি । তারপর আগ্রহ থেকে মূলত একটি একাউন্ট ওপেন করি । কিন্তু তখনো তেমন কোন কাজ পারতাম না। আমি ভাবছিলাম একাউন্ট তো খোলা হয়ে গেছে কিন্তু কাজ কিভাবে করব কিছুইতো বুঝে উঠতে পারছি না। এভাবেই পরবর্তী বেশ কিছু দিন চলে যায় । পরবর্তীতে আমি ২০১৫ সালে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর ৬ মাসের একটা কোর্স করি । প্রায় একবছর প্র্যাকটিস করার পর ২০১৬ সালে আমি প্রথম আপ ওয়ার্কে জব এপ্লাই শুরু করি । জব এপ্লাই করার ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে মার্কেট প্লেসে প্রথম কাজ পেয়েছিলাম ৫ ডলারের। এরপর বিশেষ করে কাজে খুশি হয়ে ক্লায়েন্ট যখন ২ ডলার বোনাস দিল, তখন খুব ভাল লেগেছিল । হয়ত অনেকের কাছে এটা অনেক ছোট একটা বিষয় কিন্তু আমার জন্য অনেক বড় এচিভমেন্ট ছিল । পরবর্তীতে আমি ২০১৮ সালে ফাইভারে একাউন্ট ওপেন করি । তারপর থেকে আপ ওয়ার্কে এবং ফাইভারে দুই জায়গাতেই কাজ করতে থাকি । বর্তমানে আমি দুই জায়গাতে ই গ্রাফিক্সের কাজ করছি । এভাবেই আমার ফ্রিলান্সিং জার্নি শুরু হয় ।”
“আসলে আমার শুরুটা একটু কষ্টের ছিল । কারণ আমি যখন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি তে গ্রাজুয়েশন করছিলাম তখন আমার গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কোর্স টি করে থাকি ।তখন ডিজাইনিং এর ক্লাস করে তারপর ইভিনিং-এ ইউনিভার্সিটির ক্লাস করে বাসায় ফিরতাম । আর কোর্স শেষ হওয়ার পর একটা প্রাইভেট ফার্মে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে জব করতাম ।যেহেতু পড়ার পাশাপাশি চাকরি করি ,এরমধ্যে ফ্রিলান্সিং করাটা আমার জন্য আরামদায়ক ছিল না । হ্যাঁ, কষ্ট হচ্ছিলো ঠিকই কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল অটুট যে আমি ফ্রিলান্সিং ফিল্ডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো । আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন ফ্রিলান্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি । এখন মনে হয় যে হয়ত সেই কষ্ট টুকু যদি আমি না করতাম তাহলে হয়ত আমার স্বপ্ন কখনোই বাস্তব রূপ পেতো না । আসলে শুরুটা কখনোই সহজ হয় না , সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে কনফিডেন্সের সাথে নিয়মিত কাজ করে গেলে অবশ্যই ভালো ফল পাওয়া যায় ।”
“আমি মূলত আপ ওয়ার্ক এবং ফাইভারে কাজ করে থাকি । ফ্রিলান্সার ডট কম , পিপল পার আওয়ার , ৯৯ ডিজাইনে ও আমি কিছু কাজ করেছিলাম। তবে আপ ওয়ার্কে এবং ফাইভারে ভালো সাড়া পাওয়াতে অন্য মার্কেট প্লেসগুলোতে একাউন্ট থাকলে ও কাজ করার সময় হয়ে উঠে না । “
“ফ্রিলান্সিং নামকরণ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে এটা মুক্ত পেশা । ফ্রিলান্সিং ক্যারিয়ারে আসলে নিজের সুবিধা মতো কাজ করা যায় তাই বলে এই নয় যে যা ইচ্ছা তা করা যায় । এখানে নিজের পেশাগত স্বাধীনতা কাজ করে । আর ফ্রিলান্সিং করলে নিজের ফ্যামিলি কে সময় দেয়া যায়, এটাও একটা কারণ হতে পারে আমি মনে করি । “
এক কথায় বলতে গেলে আমার কাজের পেছনে প্রথম অনুপ্রেরণা দিয়েছে আমার স্ত্রী। আসলে আমি যখন গ্রাজুয়েশন করি তখনই বিয়ে করি , তাই পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করতে চাচ্ছিলাম । আমার স্ত্রী তখন আমাকে প্রফেশনাল কোর্স করার কথা বলেছিল যা আমাকে পরবর্তীতে মার্কেটপ্লেসে কাজের ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছে । প্রথমদিকে কিছু দিন মাইক্রোস্টক সাইটে ডিজাইন সাবমিট করতাম। যদি ক্লায়েন্টের পছন্দ হতো তখন ডিজাইন সেল হতো । তারপর আমার ওয়াইফ এর উৎসাহে আপ ওয়ার্কে একাঊন্ট খুলি এবং সেখানে জব এপ্লাই করি ।এভাবেই তার অনুপ্রেরণায় আমি ধীরে ধীরে আমার লক্ষ্যে যেতে পেরেছি ।
আমি মূলত গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ করি । গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর আমি একটা কোর্স করেছিলাম । বর্তমানে আমি গ্রাফিক্স ডিজাইনের অনেক গুলো পার্টের মধ্য থেকে Photo Editing & Retouching এর কাজ করে থাকি । আমি শুরু করেছিলাম আপ ওয়ার্কে লোগো ডিজাইনের কাজ দিয়ে । লোগো ডিজাইনের পাশাপাশি আমি ভিজিটিং কার্ড, বিজনেস কার্ড ডিজাইন করতাম । এরপর আমি প্রিন্ট আইটেম ডিজাইনে চলে আসি। প্রিন্ট আইটেমের মধ্যে ফ্লায়ার, ব্যানার, এনভেলাপ বিভিন্ন কোম্পানির স্স্টেশনারিজ আইটেমের ডিজাইন করতাম । কিন্তু এখন মূলত আপ ওয়ার্ক এবং ফাইভার এই দুই মার্কেট প্লেসে ফটো এডিটিং এবং রিটাচিং এর কাজ করে থাকি । আমি মোটামুটি সব ধরনের ফটো এডিটিং এর কাজ করে থাকি । বর্তমানে মার্কেটপ্লেসে ফটো এডিটিং এর কাজ অনেক ডিমান্ডেবল।
আসলে ফ্রিলান্সিং এ-র ক্ষেত্রে অনেকে ই ভেবে থাকেন যে শুধু কাজ জানলেই ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়। কিন্তু আমি মনে করি আমরা যখনই কোন কাজ শুরু করবো তার আগে কাজটা সম্বন্ধে খুব ভালো করে রিসার্চ করে তারপর সেই কাজটা শুরু করতে হবে । আর ফ্রিলান্সার হতে হলে অবশ্যই তাকে মার্কেট সম্বন্ধে ভালো করে জানতে হবে । তার কমিউনিকেশন স্কিল ভাল হতে হবে । আমি যে সার্ভিস নিয়ে কাজ করব সেটা যা ই হোক তার সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নলেজ থাকতে হবে । মার্কেট আইডিয়া, কমিউকেশন এবং সার্ভিস সম্বন্ধে যদি স্কিল না থাকে তাহলে ফ্রিলান্সিং লাইফে সে নিজের ও ক্ষতি করবে আবার অন্যের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে যাবে ।
১। আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি ক্লায়েন্ট কে হ্যাপি রাখার জন্য প্রথম জিনিস হচ্ছে ক্লায়েন্টের সাথে রেগুলার কমিউনিকেশন করা। ক্লায়েন্টের সকল মেসেজের রেসপন্স করা। ক্লায়েন্টের সাথে আমরা অনেক সময় লং টার্ম কাজ করে থাকি সেক্ষেত্রে তাকে আমাদের প্রতিনিয়ত কাজের আপডেট দিতে হবে। এতে করে ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবে তার কাজ কতটুকু হয়েছে বা কাজের ইম্প্রুভ হচ্ছে কি না । এর ফলে তার মধ্যে ভরসা কাজ করবে যে তার কাজ আমরা নিয়মিত করছি ।
২। কাজের ডেডলাইন মেইন্টেইন করতে হবে । যখন কোন ক্লায়েন্টের কাজ করব তখন চেষ্টা করতে হবে কাজের মান ঠিক রেখে ডেডলাইনের মধ্যে কাজ টা শেষ করার । তাহলে হয়ত পরবর্তীতে সে আমাকে তার নতুন কোন কাজ দিবে ।
৩। এছাড়া আমরা যদি ক্লায়েন্টের সাথে কাজ ছাড়াও পারসোনাল কমিউনিকেশন করি যেমন, তার বিজনেস কেমন চলছে বা পার্সোনাল লাইফের আপডেট। এরকম যা দিয়ে ক্লায়েন্টের সাথে ভালো রিলেশন হবে । এতে ক্লায়েন্ট অনেক সময় হ্যাপি হয় ।
৪। অনেক সময় দেখা যায় যে ক্লায়েন্টের অন্য কোন প্রজেক্টে ছোট খাটো প্রব্লেম হচ্ছে, সে আমাদের কে বলল তার এই প্রব্লেম টা একটু সলভ করে দিতে । আমরা যদি তার প্রব্লেম টা সলভ করে দেই তাহলে ক্লায়েন্ট অনেক খুশি হয় ।
১। নতুনদের জন্য বলবো প্রচুর প্র্যাকটিস করা এবং অনেক বেশি পরিশ্রম করা । যা প্রফেশনাল লাইফে তাদেরকে অনেক হেল্প করবে ।
২। মার্কেট প্লেসে এক্টিভ থাকা , যত দ্রুত সম্ভব ক্লায়েন্টের ম্যাসেজের রেসপন্স দেয়া , কমিউনিকেশন স্কিল বা ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল ইম্প্রুভ করা যেন আমরা ক্লায়েন্টের ইন্সট্রাকশন গুলো বুঝতে পারি
৩। আশেপাশে কে কি করছে , কে আমার থেকে এগিয়ে গেছে সেটা ভেবে হতাশ হলে চলবে না । তাহলে আমরা আমদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না । আশেপাশের দিকে তাকিয়ে হতাশ না হয়ে নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে পরিশ্রম করে গেলে সফলতা আসবেই ।