পৃথিবীর বুকে আপনি যেভাবে বেঁচে থাকতে চাইবেন, আপনি সেভাবেই বেঁচে থাকতে পারবেন যদি আপনার মনোবল দৃঢ় থাকে এবং আপনার সুস্পষ্ট লক্ষ্য থাকে ।আপনি যদি লক্ষ্য ছাড়া সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান তাহলে হয়ত আপনার কিছুটা এগিয়ে যাওয়া হবে কিন্তু আপনার গন্তব্যে পৌঁছানো হবে না। এরকমই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেছেন ইমরান হোসেন প্রান্ত । যিনি ২০১৪ সালে তার ফ্রিলান্সিং জার্নি শুরু করেছিলেন। তিনি প্রথমে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে শুরু করলেও বর্তমানে তিনি মোশন গ্রাফিক ডিজাইনে কাজ করছেন। আমরা তার কাছ থেকে শুনব তার ফ্রিল্যান্সিং লাইফের জার্নির কথা …।
“ছোট থেকেই আমার টেক রিলেটেড জিনিসের প্রতি অনেক আকর্ষন ছিল এবং নিয়মিত পত্রিকার টেক আর্টিকেলগুলো দেখতাম আর ভাবতাম আমিও একদিন এরকম কাজ করব । তখন থেকেই আমার রিসার্চ করা শুরু হয় । এবং সেখান থেকেই আসলে ফ্রিল্যান্সি সম্পর্কে জানা। আমার শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ এর শুরুর দিকে। আমি প্রথমদিকে ভালো কাজ জানতামনা । অনেক কষ্ট করে সিনিয়র যারা আছেন তাদের ব্লগ, বিজনেস টিপস , তাদের আর্টিকেল সব কিছু ফলো করতাম, এবং এভাবেই আমি ফ্রিলান্সিং জার্নি শুরু করি ।”
“আমার প্রথম শুরুটা হয়েছিল ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসাবে, তারপর মোশন গ্রাফিক ডিজাইনে মুভ করি।”
“আমি যখন দশম শ্রেনীতে পড়ি তখন থেকেই মনে হত যে নিজে থেকেই কিছু করবো, প্রচলিত চাকরির বাইরে।সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই আস্তে আস্তে আমার এই ফ্রিলান্সিং লাইফে আসা । যদি ফ্রিল্যান্সিং এ না আসতাম অবশ্যই ব্যবসা করতাম। 😊”
“ফ্রিল্যান্সিং জার্নিটা অবশ্যই সহজ ছিল না, বিশেষ করে আমার জন্য আরো বেশী কঠিন ছিল, কারন আমার শুরুটা হয়েছে গ্রামে। যখন শুরু করেছিলাম তখন আমার গ্রামে ২জি নেটওয়ার্কও অনেক সময় থাকতো না। মডেমটা ইউএসবি ক্যাবল দিয়ে ঘরের চালের উপর রেখে চালাতে হত।”
“আসলে আমাদের কমিউনিটিতে অনেক ভাই ব্রাদার আছেন যারা প্রথম ফ্রিল্যান্সার হিসাবে শুরু করলেও এখন এজেন্সি করে ফেলেছেন। আমি তাদেরকে দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি । যেমন, নাহিদ ভাই, শরিফ ভাই, ফয়সাল ভাই সহ আরো অনেকেই।আমি তাদের ব্লগ ,বিজনেস টিপস সবকিছু থেকে অনুপ্রেরিত হয়েছি ।”
“আমি মুলত আপওয়ার্ক এবং ফাইভারে কাজ করি । মার্কেটপ্লেসের বাইরেও কিছু ক্লায়েন্টের কাজ করা হয় সরাসরি।”
“এককথায় বলতে গেলে ফ্রিলান্সিং লাইফে চ্যালেঞ্জিং পার্ট হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেটেড রাখা । অনলাইন মার্কেট প্লেসে প্রতিনিয়ত কাজের ধারা চেঞ্জ হচ্ছে তাই নিজের স্কিল বা নলেজ কে যদি আপডেটেড না রাখি তাহলে হবে না। একজন ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সারের সবচেয়ে বড় প্রব্লেম হয়ে যায় টাইম ম্যানেজ করা, আমার মনে হয় একদিন ২৪ ঘন্টায় না হয়ে ৪০ ঘন্টা হলে বেটার হত (জাস্ট কিডিং)। আর যারা ক্রিয়েটিভ কাজ করেন তাদের জন্য বেশ প্রব্লেমে পরতে হয়, বিশেষ করে নিত্যনতুন আইডিয়া জেনারেট করতে।”
“চার্জের ব্যাপারটা পুরোপুরি নির্ভর করে প্রজেক্টের উপর। যেমন, একটা প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে আমার কত ঘন্টা লাগবে এবং এই প্রজেক্ট শেষ করতে কোন কাজ সোর্স করতে হবে কিনা। যেমন, একজন এনিমেটর যখন চার্জ করে তখন তার নিজের চার্জের পাশাপাশি ভয়েস ওভার চার্জ, গ্রাফিক্স চার্জ, সাউন্ড ইফেক্ট চার্জ আলাদা ভাবে হিসাব করে ফাইনাল কত চার্জ করা হবে তা ঠিক করা হয়।”
“টাইম জোনটা মেইন্টেইন করা প্রথম দিকে একটা প্রব্লেম হয়ে দাড়ায় কারন বাংলাদেশের টাইম জোন এবং ইউ এস এর টাইম জোনের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। প্রথম দিকে এটা প্রব্লেম মনে হলেও এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কারন একটা নির্দিষ্ট সময়পর গিয়ে অনেকটাই সময়ের পার্থক্যর সমস্যাটা কাটিয়ে উঠা যায় যখন আপনি দীর্ঘমেয়াদে ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করবেন।”
“মানুষকে খুশি করা হলো সবচেয়ে কঠিন কাজ 😊 আর ক্লাইন্টদের হ্যাপি করা তো আরো কঠিন, তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে ৩ টা জিনিস হলো।
১. প্রজেক্ট শুরু হওয়ার আগে সেই প্রজেক্ট সম্পর্কে যতটা বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া যায়। এটা যেমন আপনার কাজকে সহজ করে দিবে তার সাথে ক্লায়েন্টও হ্যাপি হবে।
২. ওভার প্রমিস না করা। আপনি যেটা পারবেন আপনি সেটাই প্রমিজ করবেন এবং সেই অনুসারেই কাজ ডেলিভারি দিবেন।
৩. বিভিন্ন অকেশনে ক্লাইন্টকে ছোট গিফট কার্ড (ক্লাইন্টের নামে) পাঠানো তার নামে কিংবা তাকে উইশ করা (বার্থডে) মানে তার সাথে একটা ভালো কমিউনিকেশন বজায় রাখা।”
“খুব ভালো ভাবে স্কিলড না হয়ে মার্কেপ্লেসে না যাওয়া। প্রথমে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে তারপর সিনিয়র ফ্রিল্যান্সারদের সাথে কিছু প্রজেক্ট করা। এতে যেমন অভিজ্ঞতা হয় তেমনি নিজের মধ্যে কনফিডেন্স তৈরি হবে আর এটা আপনার ফ্রিল্যান্সিং জার্নিটাকে অনেকটাই সহজ করে দিবে।”
আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নিজের একটা টিম বিল্ডাপ করা এবং তাদের নিয়ে একটা এজেন্সী রান করা। সেইভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করা হচ্ছে সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন।
সবাই ভালো থাকবেন, সকলের জন্য শুভকামনা।
বি দ্রঃ উপরের উত্তরগুলো আমার রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়ান্স থেকে লেখা।