আপনি একবার ফ্রিল্যান্সিং এ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে এবং সেখানে স্যাটেলড হয়ে গেলে, আপনার পরবর্তী স্টেপ নিয়ে ভাবা উচিত। যেটি হচ্ছে আপনার নিজের বিজনেস এজেন্সি স্টার্ট করা। কিন্তু আপনার এটা মাথায় রাখতে হবে যে ফ্রিল্যান্সিং করা এবং নিজের এজেন্সি চালানো পুরোপুরি ভিন্ন বিষয়।

আপনাকে বিজনেস স্টার্ট করার জন্য অনেক এডজাস্টমেন্ট আনতে হবে। কিছু কিছু বিষয় আপনার শুরু থেকেই ক্লিয়ার রাখতে হবে। আপনি নেক্সট কোন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করবেন, কি ধরনের প্রজেক্ট বা সার্ভিস প্রোভাইড করতে চাচ্ছেন সেগুলো গুছাতে হবে। এছাড়া নিজের শিডিউল ঠিক রাখা, টিম অরগানাইজড করে রাখা এসব ছোট ছোট জিনিস ও আপনাকে সেট করে রাখতে হবে।

এজেন্সি স্টার্ট করার মানে হচ্ছে শুধুমাত্র আপনি নিজের ভবিষ্যৎ এর দায়িত্বে না বরং বাকি সবার দায়িত্ব আপনার উপর বর্তাবে। সুতরাং, এরকম ডিসিশন নেওয়ার আগে আপনাকে ১০০% শিউর হতে হবে। তাই আমি বলবো কোন ডিসিশনে যাওয়ার আগে, কিছু কিছু বিষয় আপনার কন্সিডারেশনে রাখা উচিত। এখন যারা ডিসিশন নিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন তা নিয়ে সন্দিহান; আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। চলুন জেনে আসি সেই স্টেপ গুলো।

১) এজেন্সি রান করার মত অরগানাইজেশনাল স্কিল বিল্ড করুন

আপনার এজেন্সি স্টার্ট করার আগে ভাবতে হবে আপনি আসলেই এটি চাচ্ছেন কিনা! আপনাকে প্রচুর ক্রিয়েটিভ স্টাফের দিকে খেয়াল রাখতে হবে; টিম কমিউনিকেশন ঠিক রাখা, টিম প্রপারলি হ্যান্ডেল করা এসব কিছু আপনাকে নিশ্চিন্ত করতে হবে।এজেন্সির ওনার (Owner) হিসেবে আপনাকে এডমিনিস্ট্রেটিভ কাজের উপর বেশী প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত। আপনাকে বিজনেস ডেভেলপমেন্টের সাথে সাথে প্রজেক্ট হ্যান্ডলিং ও করে যেতে হবে। যেহেতু, এজেন্সি স্টার্ট করেছেন তাই আপনার রেসপন্সিবিলিটি ও বেশী থাকবে। তাই বেসিক অরগানাইজেশনাল স্কিল বিল্ড করে যেতে হবে। আপনাকে এ স্কিল রপ্ত করার পিছনে টাইম দিয়ে যেতে হবে কেননা, আপনার এজেন্সির ওনার (Owner) হিসেবে এটি একটি মাস্ট হ্যাভ স্কিল। তাই এজেন্সি শুরু করার আগে এসব বিষয় মাথায় আনতে হবে এবং ডিসাইড করা উচিত আপনি আসলেই এজেন্সি ম্যাটারিয়াল কিনা।

২) বড় বিজনেসগুলো কিভাবে রান করে তা জানতে হবে

ইন্ডিভিজুয়াল ফ্রিল্যান্সিং এ আপনার এজেন্সি রান করার মত এক্সপারটিজ না থাকলেও চলে। আপনার নিজস্ব এজেন্সি রান করানোর জন্য ওয়ার্ক লেভেল এবং প্রফেশনালিজম বেশী দরকার পড়বে। এছাড়া ফ্রিল্যান্সার হিসেবে, আপনি খুব কম মানুষদের সাথে ইন্টারনালি লিঙ্কড হবেন যেখানে এজেন্সিতে আপনার আন্ডারে অনেক লোক কাজ করবে এবং তাদের রেসপন্সিবিলিটি ও আপনার উপর থাকবে।

বড় বিজনেসগুলোত যখন অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করা হয় তখন তাদের এমপ্লয়ি হিসেবে না কন্ট্রাক্টর হিসেবে নিবেন তা আগে থেকেই ডিসাইড করে নেওয়া হয়। এরপর তাদের মান্থলি পে করা হবে না প্রজেক্ট বেসড কন্ট্রাক্ট হবে তাও আগে থেকে ডিসাইড করে নেওয়া হয়। বিজনেস রিলেটেড ডিসিশন কিভাবে নেওয়া হচ্ছে, কিভাবে তারা তাদের বিজনেস স্টার্ট করেছে, এখন কি কি ট্রেন্ড চলছে সেগুলো নিয়ে আপনার একটু রিসার্চ করে নিতে হবে।

৩) আপনি কি সার্ভিস প্রোভাইড করবেন তা ডিসাইড করুন

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার দুই একটি স্কিল থাকবে যেগুলোতে আপনি ভাল করে আসছেন। আপনি সেই সার্ভিস গুলো নিয়ে ক্লায়েন্ট এ্যাপ্রোচ করলে ভাল রেসাল্ট পাবেন আশা করা যায়। আপনি যদি কনফিউজড থেকে থাকেন কি সার্ভিস প্রোভাইড করবেন, তাহলে আপনি আপনার আগের কমপ্লিটেড প্রজেক্ট গুলো থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। একবার ডিসাইড করা হয়ে গেলে, সেই সার্ভিস নিয়ে আপনি মার্কেটিং স্টার্ট করে দিতে পারেন। আপনি যদি শুরুতেই আনওয়ান্টেড সার্ভিস গুলোর মার্কেটিং করেন, তবে আপনার বিজনেস এক বড় রকমের ধাক্কা খাবে। তাই আপনার এবং আপনার টিমের স্ট্রেন্থ জোন গুলোর উপর ফোকাস করেন। দেখবেন আপনি ক্লায়েন্ট ইজিলি পেয়ে যাচ্ছেন এবং এজেন্সি ও এতে বুস্ট পাচ্ছে।

৪) এডভাইসর এবং মেন্টরদের সাজেশন নিন

এজেন্সি স্টার্ট করা একটি নতুন এডভেঞ্চার হবে আপনার জন্য এবং সেই এডভেঞ্চার এ সফলতা পেতে হলে আপনার সেসকল মানুষদের কাউন্সেলিং নেওয়া উচিত যারা ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দিন ধরে আছেন। আপনার যদি তার সাথে ডাইরেক্ট কমিউনিকেশন করা পসিবল না হয় তবে আপনি বিভিন্ন বিজনেস রিলেটেড বুক দেখে নিতে পারেন যেখানে আপনার প্রবলেম/ ইস্যু গুলোর সলিউশন দেওয়া হয়েছে। একটা মেন্টর আপনার কন্টাক্ট লিস্টে থাকা মানে হচ্ছে আপনার এজেন্সি সাকসেসফুল হওয়ার পসিবিলিটি বাড়ানো। তারা আপনাকে স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে; কোনগুলো তাদের কাজ করেছে, কোন গুলো করেনি। আবার তারা কি কি মিস্টেক করেছেন যে গুলো আপনি এভয়েড করতে পারেন সেটি ও আপনি জানতে পারবেন। এ সকল যাবতীয় জ্ঞান আপনি তাদের থেকে পাচ্ছেন।

এছাড়া আপনি তাদের সোশ্যাল মিডিয়া তে ফলো করে রাখবেন এবং তাদের বুক, ব্লগ রেগুলারলি ভিসিট করবেন। বিজনেস মেন্টর ছাড়া ও আপনার একাউন্টেন্ট এবং লইয়ার লাগবে যারা আপনাকে ফিনান্সিয়াল এবং লিগ্যাল ম্যাটার গুলোতে সাহায্য করবে। তাদের ছাড়া আপনি অনেক রকম কস্টলি মিস্টেক করতে পারেন। তাই তাদের সাথে রেগুলার কমিউনিকেশন মেইন্টেইন করে রাখতে হবে।

৫) ওয়ার্ক ফ্লো মেইন্টেইন করুন

ফ্রিল্যান্সিং থেকে এজেন্সি তে শিফট হওয়ার পর আপনাকে কিছু ট্রান্জিশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রপার ওয়ার্ক শিডিউল মেইন্টেইন করা। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি হয়তো রুটিন সেভাবে ফলো করেননি অথবা, রুটিন লিখে রাখেন নাই। আপনি তখন হয়তো এভাবে করে সফলতা পেয়ে আসছেন, কিন্তু এজেন্সি রান করে যেতে হলে সেইম প্রসেস ফলো করলে আপনাকে স্ট্র্যাগল করতে হবে।

তাই শুরুতে আপনাকে প্রতিটি প্রজেক্টের ওয়ার্ক ফ্লো ঠিক করে নোট ডাউন করতে হবে। যখন আপনার এটি করা শেষ হবে, আপনি বেশ কিছু জায়গাতে আইডেন্টিফাই করতে পারবেন যেগুলো প্রপারলি হ্যান্ডেল করা লাগবে। তখন আপনি অন্যদেরকে এসব জায়গাতে এসাইনমেন্ট করতে পারবেন। এটি বেশ কিছু কাজের জন্য কন্টিনিউয়াস এবং রিপিটেবল প্রসেস হবে যা একবার সেট করে ফেললে পরবর্তীতে আর কষ্ট করা লাগবে না। এরকম ভাবে কাজ করলে আপনার এবং আপনার টিমের ইফিসিয়েন্সি বাড়াতে সাহায্য করবে।

রাতারাতি ফ্রিল্যান্সার থেকে এজেন্সি স্টার্ট করার ডিসিশন নিবেন না। টাইম নিয়ে দেখুন আপনি আপনার প্রজেক্ট গুলো মেইন্টেইন করতে পারছেন কিনা বা আপনার জন্য অভারলোড হয়ে যাচ্ছে কিনা। শুরুতে ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট নিয়ে ট্রাই করে দেখতে পারেন যে আপনাকে নন-ক্লায়েন্ট টাস্ক গুলোতে সাহায্য করবে। এরপর তাকে নিয়ে প্ল্যান সাকসেসফুল হলে ধীরে ধীরে টিম বড় করার ডিসিশন নিতে পারেন। ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট শুরুতে আপনার জন্য অনেক কস্ট ইফেক্টিভ হবে এবং অপরদিকে আপনার প্রজেক্ট ও সুন্দরভাবে ম্যানেজ হয়ে যাবে। এভাবে শুরুতে ছোট ছোট স্টেপ নিয়ে কাজ গুলো করে যেতে পারেন এবং যখন সবকিছু আপনার পক্ষে থাকবে তখন প্ল্যান অনুযায়ী টিম বড় করবেন।