ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস শুনলেই আপওয়ার্ক এবং ফাইবারের নাম চলে আসে, এবং এ দুটিতেই বাংলাদেশি ফ্রীল্যান্সাররা খুব ভাল করছে। তবে এর বাইরে আর অনেক মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে।

আজকের এই পোস্টে আমরা ১২ টি ভিন্ন মার্কেটপ্লেস নিয়ে কথা বলবো, যা আপনাকে আপনার ক্যারিয়ার ডেভেলপ করতে সহায়তা করবে।

আপনি যদি কখনো ফ্রিল্যান্সিং জব সার্চ করে থাকেন, তবে আপনি সম্ভবত জানেন যে কতটা ক্লান্তিকর কাজ এটি হতে পারে। তবে, আপনাদের মতো পেশাদারদের কাজ খুঁজতে সহায়তা করার জন্য বেশ কিছু ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট রয়েছে। এই আর্টিকেলে, আমরা সেরা কিছু ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটগুলির লিস্ট করব। আপনার জন্য কোন প্লাটফর্মটি বেস্ট হবে তা আপনি এটি পড়া শেষে বুঝতে পারবেন সেই আশা রাখছি।

১) আপওয়ার্ক (Upwork)

আপওয়ার্ক ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেসে সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম গুলোরা মধ্যে একটা। আপওয়ার্কে মূলত ছোট বড় সব ধরনের প্রোজেক্ট পাওয়া যায়। এখানে একজন ফ্রীল্যান্সার দুই ধরনের প্রজেক্টে কাজ করতে পারে।

তাদের নিজস্ব একটি টাইম ট্র্যাকিং ট্যুল রয়েছে। যার মাধ্যমে আপনি একটি কাজ করতে কতটুকু সময় লাগছে তা ট্রাক করতে পারবেন এবং ক্লায়েন্ট আপনাকে সেই সময়ের বিপরীতে পেমেন্ট করবে।

আপোয়ার্কে জবে এপ্লাই করতে হলে আপনাকে টাকা খরচ করে কানেক্ট কিনতে হবে। এখানে ফ্রিতে জবে এপ্লাই করা যায় না।

আপওয়ার্ক বেশ কিছু টুল প্রোভাইড করে থাকে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার ফ্রিল্যান্স যাত্রা শুরু করতে পারবেন। আপনি অনেক বিখ্যাত ক্লায়েন্ট যেমন মাইক্রোসফ্ট, এয়ারবিএনবি, ড্রপবক্স এরকম প্রতিষ্ঠান এর জন্যও কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন।

যে কেউ তাদের চাকরিতে ফ্লেক্সিবিলিটি পাবার আশায় থাকলে তাদের অবশ্যই এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটটি চেক করা উচিত।

২) ফাইবার (Fiverr)

ছোট ছোট কাজ সেল করার জন্য ফাইবার খুবই ভাল একটি প্লাটফর্ম। এখানে প্রচুর ক্রেতা রয়েছে। আপনি যেই সার্ভিস টা বিক্রি করতে চান তা আপনাকে একটি গিগ আকারে এই মার্কেটপ্লেসে তুলতে হবে।

এখানে ভাল করতে হলে আপনার গিগটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে, অপ্টিমাইজ করতে হবে, কোন ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে কিছু জানতে চেয়ে মেসেজ করে খুব দ্রুত রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এতে আপনার রেসপন্স রেট বাড়বে যা আপনার কাজ পাবার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে।
এছাড়া আপনার আগের কাজের ফিডব্যাক আপনাকে নতুন কাজ পেতে সহায়তা করবে। ফাইবার আপনার প্রতি অর্ডার থেকে ২০% কেটে নিবে তাদের ফী হিসেবে।

ফাইভারের একটি ফ্রি কোর্স আছে যা আপনাকে আপনার স্কিল ডেভেলপ করতে এবং ক্লায়েন্টদের সঠিক উপায়ে পিচ করতে সহায়তা করবে।

৩) টপটাল (Toptal)

টপটাল একটি ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট যা কোম্পানিদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা গ্লোবালি শীর্ষস্থানীয় ৩% ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগ করতে পারে। টপটালে এক্সপিরিয়েন্সড ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করা হয়, যেখানে তারা প্রতি ঘন্টায় $৫০-$২৫০(USD) আয় করে থাকে।আপনি যদি নিজের স্কিল বৃদ্ধিতে যথেষ্ট পরিশ্রম করেন, তবে অবশ্যই আপনি তাদের একজন হতে পারেন।

৪) সিমপ্লি হায়ারড(Simply Hired)

সিম্পি হায়ার্ড এর বেস্ট জিনিসগুলির মধ্যে একটি হ’ল আপনি নিজের কাছের লোকেশনে ফ্রিল্যান্স কাজগুলি ব্রাউজ করতে পারেন। আপনি টপ বেতনের একটি লিস্ট তৈরি করতে এবং আপনার ফি কেমন হবে তা জানতে এর কিছু টুল রয়েছে যা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি তাদের ওয়েবসাইট থেকে রিসিউমে(resume) তৈরি করতে পারবেন। তাদের ব্লগের অনেক ম্যাটেরিয়াল আছে যেগুলো থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন।

৫) পিপল পার আউয়ার (People Per Hour)

এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যা তাদের সার্ভিস ব্যবহার করে। প্রতিটি ওয়ার্কারদের(worker) কাজের বেসিসে একটি রেটিং থাকে। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটি বিনামূল্যে সার্ভিস দিয়ে থাকে, তবে এখানে কম্পিটিশন খুব চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

৬) গুরু (Guru)

এখানে চিপ জবের লিস্টিং খুব কম পাবেন, ফ্রিল্যান্সারদের বিশেষজ্ঞ গ্রুপকে (Group) আকর্ষণ করার জন্য এই সাইটটি ডিজাইন করা হয়েছে।

৭) ক্রাউডেড (Crowded)

ক্রাউডেড তাদের এআই-চালিত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গর্ব করে যা কোম্পানিগুলির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এপ্লাইকারীদের খুঁজে নেয়। এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটটি প্রত্যেককে তাদের প্রাইস, অভিজ্ঞতা এবং স্কিল এর ভিত্তিতে র‍্যাংঙ্ক করে থাকে। এপ্লাইকারীদের ম্যানুয়ালি প্রত্যেক জব ওপেনিং এ এপ্লাই করতে হয় না। তাদের সিস্টেমেটিক অ্যালগরিদম এই কাজটি করে দেয়। শুধু নিয়োগ দাতার কলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে।

৮) নাইন্টি-নাইন-ডিসাইন্স (99designs)

এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটটি ডিজাইনিং কাজের উপর বেশি ফোকাস করে থাকে – লোগো থেকে বুক কভার পর্যন্ত সমস্ত কাজ। সুতরাং আপনার যদি ডিসাইনিং এর প্রতি ঝোঁক থেকে থাকে, তাহলে এই সাইটটি আপনার জন্য। এটি ক্লায়েন্টদের এমন একটি প্রতিযোগিতা শুরু করার অনুমতি দেয় যা 99 ডিজাইনের প্রত্যেকে অংশ নিতে পারে। বিনা খরচে, আপনি নিজের কাজটি দেখানোর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছেন এবং আপনার ক্রিয়েটিভ জ্ঞানকে ইম্প্রুভ (Improve) করার জন্য তাদের আর্টিকেল গুলো দেখতে পারেন।

৯) নেক্সট (Nexxt)

নেক্সট জব সার্চকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেঃ ক্যারিয়ার ফোকাস, লোকাল ফোকাস, ডাইভারসিটি (Diversity) ফোকাস এবং গ্লোবাল ফোকাস। এছাড়া ও এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটটি থেকে আপনি বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স কাজের চেষ্টা করতে পারবেন যা আপনার ক্যারিয়ারের লাইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

১০) রাইটার এক্সসেস (Writer Access)

আপনি যদি ফ্রিল্যান্স রাইটার হতে চান তবে রাইটার এক্সসেস সেরা প্ল্যাটফর্ম। এটিতে অনলাইন আর্টিকেল, কেস স্টাডি, টেক রিলেটেড পেপার ইত্যাদি সহ সব ধরণের লেখার কাজ রয়েছে। এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটটির অনেক টুল যেমনঃ কনটেন্ট এনালাইটিক্স, কীওয়ার্ড অপ্টিমাইজেশন এবং কনটেন্ট প্ল্যানার আছে যেগুলো আরও কাজ দক্ষতার সাথে শেষ করতে সহায়তা করে থাকে।

১১) টাস্ক র‍্যাবিট (Taskrabbit)

সমস্ত ফ্রিল্যান্সিং কাজ ডিজিটাল হয় না। টাস্ক র‍্যাবিট হ’ল একটি ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট যা বাড়ির কাজের উপর ফোকাস করে থাকে। সেগুলি ফার্নিচার সাজানো, মুভিং এবং প্যাকিং, প্লাম্বিং বা অন্য যে কোনও কিছু হতে পারে – আপনি এসব টাস্ক র‍্যাবিট খুঁজে পেতে পারেন।

১২) ফ্লেক্সজবস ( Flexjobs)

ফ্লেক্সজবস কেবল ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রোভাইড করে না, তবে সবাইকে এরা ক্যারিয়ারের পথ খুঁজে নিতে উৎসাহিত করে। প্রতি মাসে ১৪.৯৫ ডলারে খরচে, আপনি জব প্রোভাইডারদের নেটওয়ার্ক, বিভিন্ন স্কিল সেট এবং প্রতিটি কোম্পানির ডিটেইল ডেসক্রিপশন এর সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস পাবেন।

এছাড়া আরও বেশ কিছু পপুলার ফ্রিল্যান্স সাইট রয়েছে যেগুলো থেকে ও উপার্জন করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সার হওয়ার অর্থই কিন্তু হচ্ছে আপনি কখন এবং কোথায় কাজ করবেন তা বুঝে নিতে পারবেন এবং একইসাথে আপনার পরবর্তী কাজটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার আরও ফ্লেক্সিবিলিটি থাকবে। তাই আপনি যে রকম কাজ করতে আগ্রহ বোধ করবেন সেটি যাতে অনায়াসে করে যেতে পারেন তার জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্ম চেনাটা আপনার জরুরী। আর উপরের এই ইনফো গুলো আপনাকে আপনার পছন্দের প্লাটফর্ম বেছে নিতে সহায়তা করবে আশা করি।