আপনি কি একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার হওয়ার কথা ভাবছেন? আপনি কি ওয়ার্ড প্লে করতে ভালোবাসেন? অথবা রাইটিং দিয়ে আপনি আপনার দিনের কাজের বাইরে কিছু এক্সট্রা আয় করতে চাচ্ছেন? কারন যা কিছুই হয়ে থাকুক না কেনো, আপনার যদি লেখার প্রতি আগ্রহ থেকে থাকে তাহলে কোথা থেকে বা কি প্রসেস ফলো করে আগাতে হবে তা আপনার রিসার্চ করাটা গুরুত্বপূর্ণ।  

রাইটার হওয়ার অর্থ হচ্ছে  আপনার আর্ট ক্রমাগত বিকাশ পেতে থাকবে। কেউ শুরুতেই কোন কিছতে মাস্টারি অর্জন করে নেয় না। আপনি ধীরে ধীরে অনেক নতুন জিনিস আবিষ্কার করবেন। লেখা গুলোকে পরিমার্জিত করতে শিখে যাবেন এবং অবশেষে আপনি সকলের ভয়েস হিসেবে নিজের লেখাকে প্রতিষ্ঠিত করে নিতে পারবেন। সেই পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে আপনার সেরকম অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিতে হবে।

আপনার রাইটিং স্কিল ডেভেলপ যখন হবে তখন আপনি আপনার আইডিয়া গুলো আর ও দ্রুত উপস্থাপন করতে পারবেন। তখন একবারে এক শব্দে আটকে না থেকে আপনার আঙ্গুলগুলো বিদ্যুৎ গতিতে চলবে যা আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনার দর্শকদের ঠিক সেরকম।  

সুতরাং, যারা রাইটিং কে পেশা হিসেবে নিতে চাচ্ছেন তাদের কিছু স্টেপ ফলো করা মেন্ডেটারি। সেই সব স্টেপ সম্পর্কে আসুন জেনে আসিঃ

ফ্রিল্যান্স রাইটার কি করে তা জানুন

ফ্রিল্যান্স রাইটাররা নানা প্রকারের কন্টেন্ট প্রডিউস করার জন্য বিভিন্ন ইন্ড্রাস্টি থেকে রাইটিং অপরচুনিটি পেয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্স রাইটিং জব গুলো যেমন হয়ে থাকেঃ

 

আপনি ফ্রিল্যান্সিং এ রাইটিং ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে, উপরের যেকোনো প্রকারের রাইটিং নিয়ে শুরু করতে পারেন। প্রথমত, আপনার রাইটিং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানা থাকা লাগবে এবং এরপর যে ধরনের কপিরাইটিং আপনি উপভোগ করছেন তা দিয়ে শুরু করে ফেলুন। এরপরের কাজ হচ্ছে ক্লায়েন্ট খোঁজা যার হয়ে আপনি কাজ করবেন ।

রাইটিং সম্পর্কিত স্কিল ডেভেলপ করুন

আপনাকে রাইটিং সম্পর্কিত যত স্কিল আছে সেগুলো আগে নিজে থেকে যাচাই করে নিতে হবে। সঠিক শব্দের ব্যবহার, বাক্য ঠিক রাখা এবং একটি প্যারাগ্রাফে এগুলোর সঠিক মিক্সচার থাকতে হবে। মাঝে মাঝে বাক্যে শব্দের ব্যবহারে ক্রিয়েটিভিটি আনার চেষ্টা করতে হবে। তবে এসব বেসিক স্কিল থাকার সাথে সাথে আপনার একজন প্রফেশনাল রাইটারের গুন ও আয়ত্ত করে নিতে হবে। সেসব হচ্ছেঃ

রাইটিং নিস (Niche) খুঁজে বের করুন

আপনার পছন্দের যেকোনো একটি সম্পর্কে ব্লগ শুরু করা, আপনার রাইটিং ক্যারিয়ারের একটি দুর্দান্ত শুরু হতে পারে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী লেখক হিসাবে, আপনি যা জানেন তা দিয়ে শুরু করুন।

বর্তমানে টেক ইন্ডাস্ট্রিতে সর্বদা লেখকদের প্রয়োজন রয়েছে যারা জটিল ধারণাগুলি সিম্পল ভাষায় তুলে ধরতে পারেন। অথবা হতে পারে আপনার হেলথ সেক্টরে একটি দীর্ঘ ক্যারিয়ার ছিল। এখন আপনি আপনার এক্সপারটিস এই সেক্টরের কোন একটি টপিক নিয়ে লিখতে পারেন যেহেতু এটি একটি বিশাল ইন্ডাস্ট্রি। 

এরকমভাবে বলার অর্থ হল আপনি এটি জানেন বা না জানেন, আপনি ও কোন কিছুর বিশেষজ্ঞ। আপনি ইতিমধ্যে যা জানেন সেই টপিক বাছাই করে লিখতে শুরু করে দিন। এখন আপনার টপিক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন মাথায় রাখলে নিজেই ক্লিয়ার হতে পারবেন। আপনাকে যা আগ্রহী করে তুলে, আপনি যেটি নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন, আপনি যে টপিক ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে যেতে পারবেন এসব নিয়ে ভাবলে দেখবেন আপনার টপিক সিলেকশন নিয়ে আর কনফিউশন থাকবে না।  

ফ্রিল্যান্স রাইটিং এর সোর্স খুজে বের করুন

আপনি যখন আপনার ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার শুরু করেন তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গুলির মধ্যে একটি হলো কাজ খুজে পাওয়া। বর্তমানে প্রচুর ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে, তবে কয়েকটি এমন রয়েছে যা আপনার প্রথম ক্লায়েন্টকে হায়ার করার জন্য দুর্দান্ত। যেমনঃ আপওয়ার্ক। আপওয়ার্কে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের সাফল্য খুব বেশী। এখানে প্রচুর রাইটিং গিগ অফার করে থাকে। আপনি আপনার পছন্দের ক‍্যাটাগরির কাজ এখানে অবশ্যই খুঁজে পাবেন। এছাড়া আপনি লিঙ্কডইনে ট্রাই করে দেখতে পারেন। 

অনলাইন পোর্টফলি ও তৈরি করুন  

আপনি যদি আপনার ব্লগের বাইরে আর কিছু পাবলিশ না করে থাকেন, তবে অনলাইন পোর্টফলিও এক্ষেত্রে দারুন কাজে দিবে। এটি দেখে অনেক ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজে নিয়োগ দিতে আগ্রহী হবে। তাই এর ডিজাইনিং এর উপর এবং আপনার বেস্ট রাইটিং স্যাম্পল গুলো যাতে সুন্দর করে অরগানাইজড থাকে, বানানোর সময় সেটি খেয়াল রাখতে হবে।  

রিজেকশন এক্সসেপ্ট করতে শিখুন

রিজেকশন কে ডিফিট হিসাবে নিবেন না। পরিবর্তে, আপনার রাইটিং স্কিল আর ও বেটার করার সুযোগ হিসেবে এটিকে নিন। এমন অনেক কারণ রয়েছে যার কারণে কেউ আপনার লেখা চায় না। কখনও কখনও দর্শকরা বর্তমানে যা নিয়ে আগ্রহী তার জন্য আপনার লেখাটি উপযুক্ত নয়। কখনো বা অন্যান্য রাইটাররা অতীতেও সেইম কিছু প্রকাশ করেছে যা আপনার আর্টিকেলের সাথে মিলে যায়। এরকম ভাবনায় আপনার রাইটিং সবার কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায় না। তাই এরপর যে কাজটি হতে পারে নেক্সট স্টেপ, তা নতুন রাইটারদের জন্য একটু কষ্টকর-  আপনার এক্সিস্টিং লিখা এডিটিং করা।

রাইটিং এডিট করা এবং লিখার ফিডব্যাক নেওয়া

“To write is human, to edit is divine — Stephen King”. স্টিফেন কিং এর এই উক্তিটিই পুরো রাইটিং প্রসেস কে তুলে ধরে। আপনার লিখার স্টাইলে অনেক ভুল থাকতে পারে, ওয়ার্ড মিসপ্লেস হতে পারে এবং আরও নানা জায়গায় ভুল থাকতে পারে। একটি এডিটর আপনার সেই ড্রাফট লিখাকে পরিমার্জিত রুপ দিতে পারে। এডিটরকে এনেমি না ভেবে এর ফিডব্যাক পজিটিভলি নিতে হবে এবং আপনার লেখার কোথায় ভুল আছে তা এটির সাজেশনে বুঝে নিতে পারবেন। পরবর্তীতে অন্য কিছু লিখার সময় আপনার লিখার বাজে স্বভাব গুলো মাথায় থাকবে যেটি আপনি আগে হয়তো খেয়াল ও করতেন না।

আপনি এডিটরের ফিডব্যাক নেয়ার পাশাপাশি আর একটি কাজ করতে পারেন সেটি হচ্ছে রাইটিং মেন্টর খুঁজে বের করা।  তারা ও এক সময় প্রবলেম গুলো ফেস করে আসছে আপনি যে প্রবলেম এখন ফেস করছেন। তাদের থেকে আপনি আপনার প্রবলেম গুলোর ইন-ডেপ্টথ এনালাইসিস নিয়ে লিখার ইম্প্রুভ করতে পারবেন। সুতরাং তাদের শেয়ার করা এক্সপারটিজ ও আপনার রাইটিং নলেজ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। 

রাইটিং অ্যাপ ব্যবহার করুন

স্কিলড রাইটারের ফিডব্যাক বা এডিটরের ফিডব্যাক ইনিশিয়ালি আপনার রাইটিং স্ট্রাগল থেকে হেল্প করবে। এগুলো ছাড়া ও আপনি কিছু অ্যাপ আছে সেটি থেকে ও হেল্প নিতে পারেন। অনেক রাইটার হেমিংওয়ে (Hemingway) ব্যবহার করে থাকে। এটি আপনার গ্রামারটিকাল মিস্টেক গুলো পয়েন্ট আউট করে দেয় এবং আপনার লিখার রিডিবিলিটির একটি রেটিং দিয়ে থাকে। এছাড়া গ্রামারলি আছে যেটি ও অনেকের কাছে পপুলার। এই অ্যাপ গুলো আপনার এডিটরের বিকল্প না বরং এটি সাইড টুল যা আপনাকে কমন মিস্টেক গুলো ধরতে সাহায্য করবে। 

ফ্রিল্যান্সার হওয়া মানে হছে আপনার ক্যারিয়ারের পথে আপনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কিন্তু সম্ভাব্য কঠিন একটি দিক হল নিজে থেকে আপনি কীভাবে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাবেন তা খুঁজে বের করতে হবে। যেটা ম্যাটার করে সব থেকে বেশি তা হচ্ছে আপনি নতুন সুযোগ গুলি খুঁজছেন এবং আপনার সমমনা ব্যক্তিদের সাথে কানেকশন তৈরি করছেন।