ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং বর্তমান সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে এখন বেশ আলোচিত একটি বিষয়। বিশেষ করে তরুণ যুব সমাজের কাছে, যারা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের পথ গড়ে তুলতে চায়। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পেশা যেখানে যে কেউ তার মেধা দিয়ে শূন্য থেকে বেশ বড় সফলতা বয়ে আনতে পারে। যারা বাইরে গিয়ে কাজ করতে অনিচ্ছুক তাদের জন্যে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে উপার্জনের হাতিয়ার। যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময় কাজ করা যায়, রাস্তার জ্যাম পেরিয়ে অফিসে যেতে হয় না, নিজের বাসায়ই স্বাধীনভাবে কাজ করা যায়।  তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল যে, ঘরে বসেই অনেক কাজ করা সম্ভব। একটা ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই সমস্ত পৃথিবী চলে আসে হাতের মুঠোয়। ঘরে বসে কাজ করা যায় এই সুবিধার কারণে করোনাকালে ফ্রিল্যান্সিং কাজের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। 

ফ্রিল্যান্সিং এর বৈশ্বিক অবস্থা

করোনা মহামারিতে গোটা বিশ্বের ছোট বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের আর্থিক খরচ কমিয়ে এনেছে। সকল প্রতিষ্ঠানই চাইছে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠে তাদের বিনিয়োগের যথাযথ ব্যবহার হোক। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আউটসোর্সিং কাজের তালিকায় নতুন নতুন কাজ যুক্ত করেছে। তাদের কাজের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে একাউন্টিং টেকনিশিয়ান, অডিটর ও এন্টিলেভেল একাউন্টেন্ট ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করিয়ে নিচ্ছে। এমন কি আন্তর্জাতিক মানের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের কাজ ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। ফ্রিল্যান্সারদের এসব প্রতিষ্ঠানে একাউন্টেন্ট ও অডিটর হিসেবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

করোনাকালে এসেছে ফ্রিল্যান্সিং এর বিপ্লব, বেড়েছে এর কাজের চাহিদা। স্টিভ জবস ২০০৩ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ব্যবসায় বড় কাজগুলো কখনো একজন ব্যক্তি একা করেন না। ওই কাজগুলো দলবদ্ধভাবে করা হয়।’ একাই একশো – ধারণা থেকে সরে এসেছে পৃথিবী গত শতাব্দীতেই। তাই তো পুরো বিশ্বে আউটসোর্সিং পেশাজীবীদের বাজার তৈরি হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ে ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশও। বিশ্বে আউটসোর্সিং তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রায় ছয় লাখের বেশি মানুষ আউটসোর্সিং কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে সরকার। করোনার মহামারীতে সব কাজ থেমে থাকলেও থেমে থাকেনি ফ্রিল্যান্সিং। ফোর্বসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্রিল্যান্স বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ছে। বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোয় নতুন নতুন কাজের চাহিদা তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া করোনাকালে আপওয়ার্ক, ফাইভার ও ফ্রিল্যান্সার ডটকমের আয় বেড়ে গেছে।

দেশে ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান অবস্থা

বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের কাজের সুযোগ বেড়েছে। কাজের চাপ ও ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা বাড়ায় তারা আগের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। এদিকে করোনার কারণে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সাররা আরো বেশি করে কাজে সময় দিতে পারছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই লকডাউনে ঘরবন্দী হয়ে পড়েন তরুণেরা। এ সময় অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধা বিস্তৃত হওয়ায় অনলাইনে এখন তারা অনেক বেশি সক্রিয়। করোনার আগে অনলাইনে ক্লাস করা, মিটিং করা, অনুষ্ঠান করা প্রায় অসম্ভব ছিল। মানুষ একে ভালোভাবে গ্রহণ করতো না। ফলে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ভালো মানের যেকোন ট্রেনিং এর জন্য শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আসতে হতো। ঢাকায় আবাসন সমস্যা, খাদ্য পানীয়, নিরাপত্তার সমস্যা মিলিয়ে প্রান্তিক অনেকেই সুযোগ পেতো না, ভালো মানের ট্রেনিং গ্রহণ করার। এখন বিখ্যাত ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কোর্সগুলো অনলাইন করে ফেলায় সারাদেশের শিক্ষানবিশ ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে অংশগ্রহণের সমতা এসেছে। আবার ক্লাসরুম বা ভেন্যু ভাড়া করার খরচ বেঁচে যাওয়ায় ফ্রিল্যান্সিং কোর্সগুলোর ফি বাবদ খরচ কমেছে। শিক্ষার্থীরা কম টাকায় দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে। বৈশ্বিক ভাবে ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সফল ফ্রিল্যান্সাররা দ্রুত তাদের টিম বাড়াতে চাচ্ছেন আর তাই বিনামূল্যেও দিয়ে যাচ্ছেন প্রশিক্ষণ।  হোয়াটসঅ্যাপ, জুম, গুগল মিটের মতো নানা মাধ্যম ব্যবহারের জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট তাঁদের জন্য সহায়ক হয়েছে।

অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ অনলাইনেই পাওয়া সম্ভব। আর এ কারণে করোনাকালে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় দেশের শিক্ষার্থীরা নতুন করে ভাবছে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যে, ঘরে বসেই দক্ষ করে তুলছে নিজেদের এবং অর্থ উপার্জন করছে। ঘরে বসে সুবিধাজনক সময়ে এবং অনেক কম খরচেই অনলাইনে এসব কোর্স করতে পারছে শিক্ষার্থীরা। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ঘরে বসে তারা দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক নানা কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে।

করোনার কারণে বর্তমানে সকল প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ। যার ফলে শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্রশিক্ষণের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে তারা ল্যাপটপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে। ইতোমধ্যে ফোরজি নেটওয়ার্ক এসে পড়ায় সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে স্বচ্ছলভাবে। দ্রুত গতির মানসম্মত ইন্টারনেট ঘরের মধ্যে পাওয়ায় পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে না কাউকে। করোনার স্থবির অবস্থার মধ্যেও যে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং কোর্সগুলো গতিশীল ভূমিকা রাখছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ফেসবুক গ্রুপগুলোতে আগের চেয়ে দ্বিগুণ শিক্ষার্থী ও আগ্রহীদের সংখ্যা দেখে।

ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান চাহিদা ব্যাপক। করোনা ভাইরাসের কারণে সেই চাহিদা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরে বসে কাজ করে আয় উপার্জন শিখে নিয়েছে হাজার হাজার তরুণ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পরও এর চাহিদার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।