ফয়সাল মৃধা রনি একজন পেশাদার ওয়েব ডেভলপার এবং ফ্রিল্যান্সার একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসাবে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং যাত্রা সাফল্যের এক অনন্য উদাহরণ আমরা তার গল্পটি জানার চেষ্টা করেছি এবং তার ধারাবাহিকতায় আজ আমরা তার যাত্রা নিয়ে জানবো

ফয়সালের পথ চলার শুরু

ফয়সাল ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন তার মামা ( জাহিদুল ইসলাম ) এর কাছ থেকে পরবর্তীতে পত্রিকা পড়ে জানতে পারেন যে অনলাইন থেকে কাজ করে টাকা উপার্জন করা যায় সেখান থেকেই তার কৌতূহল জাগে, তার এই নানা রকম কৌতূহল থেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু হয় ফয়সাল ছিলেন একজন কৌতূহলী ব্যক্তি তার শেখার কোন সীমা ছিল না, তিনি সব বিষয় শেখার প্রতি সংকল্পবদ্ধ ছিলেন যার কারণে তার একটি বছর পরিশ্রম করতে হয়েছিল এবং সে সময় ছিল তার জীবনের সব চেয়ে কঠিন সময় ২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি

ফয়সাল মৃধার কাজ

ফয়সাল বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল প্লাটফর্মে হেড অফ মার্কেটিং হিসেবে ইউএসএ এর বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন তিনি আপওয়ার্ক এবং ফাইবারে কাজের মার্কেটপ্লেসের বাইরেও সরাসরি কিছু ক্লায়েন্টের কাজ করছেন ফ্রিল্যান্সিং এর বাইরে সাধারণত তার ছাত্রজীবনে (২০১১-২০১৮) সাল পর্যন্ত টিউশনি করেন এবং ২০১৫ সালে একটি বিদ্যালয়ে তিনি তিন মাসের জন্য শিক্ষাকতার সুযোগ পেয়েছিলেন সব কিছুতেই নতুনত্ব আসে তখন তিনি কাজের মধ্য দিয়েই এগুলো শিখে ফেলেন এবং সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করেন।

কেন ফ্রিল্যান্সিং?

তিনি বলেন, ‘বাবার মতো তিনিও ছোট থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন তাই তিনি সবার থেকে কিছু একটা আলাদা করতে চেয়েছিলেন এবং তার বাবার ইচ্ছে ছিল তাকে উচ্চশিক্ষিত করার ও তার নিজের আদর্শে গড়ে তোলার দেশ ও সমাজের উন্নতি করার জন্য।’ ফয়সাল এখন ফ্রিল্যান্সিং করে দেশে বসে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারছেন এবং অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছেন পাশাপাশি নিজের মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে বিদেশি কোম্পানিতে দেশে বসে কাজ করছন ফয়সাল একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। ফ্রিল্যান্সিংয়ে যেহেতু স্বাধীনভাবে কাজ করার স্বাধীনতা আছে, কারো কোন কথা শুনতে হয়না, যেকোনো জায়গায় বসে কাজ করা যায় সেজন্যই তিনি ফ্রিল্যান্সিং বেছে নেন

যাত্রা কতটা কঠিন ছিল?

ফয়ালের শুরুটা কিছুটা চ্যাল্যাঞ্জিং ছিল তার সময়ে কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও ছিল না যা থেকে কেউ ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারে অনলাইন ডেটা এখনকার মতো এতো সজ্জিত ছিল নাফয়সালের এই যাত্রায় তার মা ছিল একমাত্র সহায়তিনি বলেন, “২০১৩ সাল থেকে আমি টিউশনি শুরু করি সেই টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া ইন্টারনেট বিল এবং খরচ দিয়েছি মাঝে মাঝে বন্ধুর সাইকেল নিয়ে যেতাম অফিসে।  আমাদের বাসাটা ছিল গ্রামের দিকে বিধায় ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে শহরে বাসা নিতে হয়েছিল। জবে এপ্লাই করার পর ক্লাইন্ট যখন রিপ্লাই দিত ৪-৫ কিলোমিটার হেটে বা সাইকেলে করে যেতে হতো রাত ১-২টার সময়। এভাবেই ফয়সাল দিন নেই রাত নেই টানা একবছর নিজের স্কিল ডেভেলপ করেছেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসের ১৩ তারিখ ওডেস্ক একাউন্ট করে এবং জুনের ১৩ তারিখ প্রথম ডলারের একটি কাজ পায় কিন্তু ক্লাইন্ট কোন রিভিউ দেয়নি যার কারণে দ্বিতীয় প্রজেক্ট পেতে তাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল কিন্তু সে হাল ছেড়ে দেয়নি। ফয়সালের এই ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম একবছর পর ২০১৬ সালের জুলাইর ৩ তারিখ তাকে দ্বিতীয় প্রজেক্ট এনে দেয়, কত রাত তার নির্ঘুমে কেটেছে তার হিসেব নেই।

 

ফয়সাল মৃধা রনির

ফয়সালের অনুপ্রেরণা

ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসার জন্য ফয়সাল কারো দ্বারা অনুপ্রাণিত হননি। সেসময়ে ইউটিউব, গুগল ও বিভিন্ন আর্টিকেল তাকে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেয়। তবে বাস্তবিক ভাবে তার কাজের পিছনে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এমন দুজন ব্যক্তির একজন তার মা এবং দ্বিতীয়ত তার মামা (জাহিদুল ইসলাম)। ফয়সাল বলেন যে, তিনি যখন রাত জেগে কাজ করতেন ন তখন তার মা না ঘুমিয়ে তার পাশে বসে থাকতেন। ফয়সাল কাজে বিশ্বাসী, কথায় নন তাই কাজই তার সব।

ফ্রিল্যান্সিং এর বাহিরেও ফয়সাল মৃধার অন্যান্য কাজ

ফয়সাল মৃধা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পরেও ২০১৬-১৮ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি টিউশনি করেছেন এরপর তিনি টিউশনি ছেড়ে দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাছাড়া তার কোন কাজের অভিজ্ঞতা নেই। কখনো কোন চাকরির জন্য চেষ্টা করা হয় নি এবং ইচ্ছাশক্তি ও কাজ করেনি। 

আপনি কীভাবে আপনার দক্ষতা বিকাশ করতে পারেন?

এ বিষয়ে ফয়সাল বলেন, ‘ই-মেইল পরিচালনা, ফোন টেক্সট, বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ দলের সদস্যদের সাথে সমন্বয় পাওয়ারপয়েন্ট, জি সুইট, গুগল ভয়েস এগুলোর ভিতর অনেক নতুনত্ব থাকে তখন কাজের মধ্যেই এগুলো শিখে ফেলি।’

ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি কি কি শিখেছেন?

ফয়সাল তার নিজের শক্তি বিকাশ ও ব্যবহারে মনোনিবেশ করতে পেরেছেন। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করা। পরিস্থিতিটি কীভাবে পরিবর্তন করা যায় তা শিখেছেন।

ক্লায়েন্টকে খুশি রাখতে ফয়সালের ৩ পরামর্শ

এ সম্পর্কে ফয়সাল মৃধা ৩টি বিষয়ে কথা বলেন,

যোগাযোগঃ ক্লায়েন্টেদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময় চেয়ে নেয়া উচিত, যে সময়ে ক্লায়েন্ট প্রতিদিন ফ্রি থাকে এবং সময় দিবে। হোক সেটা আধা ঘণ্টা বা ১০মিনিট।

প্রজেক্ট সম্পর্কে কথা বলাঃ কোন বিষয় না বুঝল সরাসরি ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞেস করা এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ পৌছে দেয়া ও কোয়ালিটিফুল সার্ভিস দেয়া।

প্রতিক্রিয়া জানাঃ কোন প্রকল্প বা কাজ শেষ করার পরে প্রতিক্রিয়া জিজ্ঞেস করুন, বেশিরভাগ সময়ই ক্লায়েন্টরা আপত্তি করবে না কাজ পছন্দ হলে তারা আবার পুনরায় আপনাকে কাজ দিবেন এবং পাশাপাশি আগের ক্লায়েন্টদের সাথেও যোগাযোগ রাখবেন যেকোনো উৎসবে তাদেরকে উইশ করবেন। 

নতুনদের জন্য পরামর্শ

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের প্রথমে ভয়- আমার কী হবে? আমি কি বাজারে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হব? ফয়সাল নতুনদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ 

প্রথম কাজ হলো নিজেকে সেট করা যে আমি ফ্রিল্যান্সিং করবোই। পাশাপাশি একাডেমিক সাবজেক্ট কি ছিল সেই রিলেটেড সেক্টর নিয়ে আগাতে পারেন এবং মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন সেক্টর গুলো চেক করে দেখতে পারেন যে আপনার একাডেমিক সাবজেক্ট রিলেটেড কোন কাজ মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যায় কিনা বা ভবিষ্যতে এর চাহিদা কী রকম”। ফয়সাল মৃধা আরো বলেন, একমাত্র টাকা উপার্জন করাই ফ্রিল্যান্সিং এর মূল উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আমাদের দেশের স্কিল উন্নত বিশ্বের সামনে প্রদর্শন করা। ক্লায়েন্টদের বাংলাদেশ নিয়ে যেনো কোনো নেতিবাচক ধারণা তৈরি না হয় এই বিষয়টা খেয়াল রাখা সবার একান্ত দরকার। তাই আয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য কমপ্লিট স্কিলসেট নিয়ে প্রফেশনালি অগ্রসর হতে হবে। এছাড়াও তিনি দক্ষ ও কঠোর পরিশ্রমি হতে বলেন।

ভবিষ্যতের জন্য ফয়সালের লক্ষ

ফয়সালের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে সে নিজের একটি আইটি ফার্ম গড়ে তোলা যেখানে সে ৫০ জনের কর্মস্থানের ব্যবস্থা থাকবে এবং এর পাশাপাশি তার মার সব ইচ্ছে বা শখ পূরণ করবেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তিনি দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে চান।

দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে আজ ফয়সাল মৃধা রনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার, যিনি বর্তমানে আরো অনেককেই সফল হতে সহায়তা করছেন। তিনি শুধু নিজেই এগিয়ে যাননি, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তরুণ প্রজন্মকে, সমাজকে, এবং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশকে। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করছেন এবং দেশের অর্থনৈতিক খাতেও ভূমিকা রাখছেন।