পৃথিবীতে সবাই সমান ভাবে  লেখাপড়া করে না , কারো  পড়তে অনেক ভালো লাগে, কারো  শিখতে অনেক ভালো লাগে, আবার কেউ কেউ আছেন যারা নিজে কিছু করতে চান । এমনই একজন সফল ফ্রিল্যান্সার তিনি হচ্ছেন সুবীর সেন। যিনি অনার্স ১ম বর্ষেই ফ্রিল্যান্সার ক্যারিয়ারে জার্নি শুরু করেন । ২০১২ সালে ওডেস্কে (Odesk) (যা বর্তমানে আপওয়ার্ক) ১০ ডলারের একটা প্রজেক্টের মাধ্যমে যার ফ্রিল্যান্সিংক্যারিয়ার শুরু হইয়েছিল । তার কাছ থেকে তার ফ্রিল্যান্সিং জার্নির কথা জানতে চেয়েছিলাম,তার সেই ফ্রিল্যান্সিং জার্নি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি :

কখন এবং কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং এর শুরু

আমি যখন অনার্স ১ম বর্ষে পরি, তখন আমি আমার এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শিখেছিলাম, আমি কাজ শেখার পর ওডেস্কে একটা প্রোফাইল ক্রিয়েট করি। প্রোফাইল ক্রিয়েট করার প্রথম দিনেই আমি একটা জব পেয়ে যাই। যেটা ছিল ১০ ডলারের একটা প্রজেক্ট । আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ফ্রিল্যান্সিং দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু করা উচিত । ২০১২ সালে আমি আমার ১ম প্রজেক্টটা পাই । সেই ১০ ডলারের প্রজেক্টটা দিয়েই আমার ফ্রিল্যান্সিং শুরু হয় । 

আপনি সাধারণত  কি কাজ করেন 

আমি একজন লোকাল এসইও স্পেশালিস্ট। ২০১২ সাল থেকে আমি লোকাল এসইও এর জন্য Citation building এর  কাজ করছি। আমি ইউএসএ, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য অনেক দেশের জন্য আপওয়ার্ক এবং ফাইভারের মাধ্যমে লোকাল সাইটেশন এসইওতে (SEO) সফল ভাবে অনেকগুলো প্রজেক্ট করেছি।

কেন ফ্রিল্যান্সিং করছেন 

আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল যে আমি যখন কাজ করব ,আমি আমার বাবার মতো আর্মিতে কাজ করব (আর্মি হবো) । অন্যথায় অন্য কোন কাজ করবো না । আমি সবসময়ই অন্যদের থেকে আলাদা কিছু করতে চাইতাম । কিন্তু যখন আমি ফ্রিল্যান্সিং করা শিখলাম তখন বুঝতে পারলাম যে এখানে ফ্রিডম আছে। স্বাধীন ভাবে কাজ করা যায় এবং আমি যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করতে পারব । ফ্রিল্যান্সিং অন্য যে কোনো জবের মতো না। তাই আমি ফ্রিল্যান্সিং কন্টিনিউ করেছি । 

সুবীর সেন

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে আপনার জার্নি টা কেমন ছিল 

শুরুটা আমার জন্য কঠিন ছিল । আমি আমার লেখাপড়া নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম না কখনোই । আমার ফ্যামিলি আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকত । ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে আমার ফ্যামিলি আমাকে সাপোর্ট করেনি। আমার ফ্যামিলি থেকে কোন প্রকার সাপোর্ট না পেয়ে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম যে আমি নিজে নিজেই কিছু করে দেখাব । তারপর থেকে আমি ফ্যামিলি থেকে টাকা নেয়া বন্ধ করে দিলাম, এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল  কারণ আমার লেখাপড়া কন্টিনিউ করার জন্য প্রতি মাসে টাকার প্রয়োজন ছিল ।আমার নিজের কোন ল্যাপটপ ও ছিল না, শেখার জন্য কোন রিসোর্স পাওয়া ও অনেক সহজ ছিল না । তখন প্রতিটা সেকেন্ড আমাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে । 

আপনার কাজের পেছনে অনুপ্রেরণা কার ? 

আমার কাজের অনুপ্রেরনা ছিল এম ডি আরশাদ আলী সরকার। উনি আমার কাজ শেখার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছেন এবং আমার  স্কিল ইম্প্রুভ (Improve) করার ক্ষেত্রে এখনও অনেক সাজেশন দিয়ে থাকেন। আমি কোন প্রবলেম ফেইস করলে তার থেকে যেকোনো হেল্প নিয়ে থাকি । কাজ শেখার ক্ষেত্রে আমি তার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছি । 

বর্তমানে আপনি কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করছেন :

বর্তমানে কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করছেন সুবীর সেন এর কাছে জানতে চাইলে বলেন:

“আমি শুরু থেকেই যখন কাজ শুরু করেছি তখন থেকেই আপওয়ার্কে (Upwork) (পূর্বে oDesk নামে পরিচিত ছিল, কিছুদিন পূর্বে UpWork এ পরিবর্তন হয়েছে) এবং ফাইভারে (Fiverr) কাজ করছি । বর্তমানে UpWork ই ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস লিড করছে| বেসিক্যালি এই ওয়েবসাইটে বায়াররা বিভিন্ন ধরনের জব পোস্ট করে থাকেন, আর ফ্রিল্যান্সারগন তাদের স্কিল অনুযায়ী অ্যাপ্লাই করেন। বায়ার সব আবেদনকারী মধ্যে থেকে বাছাই করে ইন্টারভিউ নিয়ে থাকেন আপওয়ার্ক (Upwork) মেসেজ অথবা স্কাইপ চ্যাট (Skype chat) এর মাধ্যমে, অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্স কল এর মাধ্যমেও ইন্টারভিউ নিয়ে থাকেন | ফাইবার (fiverr) হচ্ছে ঠিক তার বিপরীত এখানে বায়ার এর পরিবর্তে আপনি নিজে কাজ পোস্ট (Job Post) করবেন, আপনার স্কিল্ড অনুযায়ী আপনি কি কি জানেন তার বিস্তারিত বিবরণ দিবেন। ওর সাথে আপনার কাজের এইটা পোর্টফোলিও জব পোস্ট এর সাথে যুক্ত করে দিতে হবে | বায়ারের কাছে আপনার সার্ভিসটি পছন্দ হলে, কিনে নিবে| সব মিলিয়ে ব্যাপার গুলো আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। তাই অনেক মার্কেট প্লেসের মধ্যে এই ২টা জায়গায় কাজ করে আমার ভালো লাগে।”

ফ্রিল্যান্সিং এ আপনার বড় ব্রেকটি কী ছিল?

২০১৩ সালে মোঃ মাসুদুর রহমানের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। তিনি আমাকে একটি দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এটা আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে একটি বড় ব্রেক ছিল। আসলে একা কাজ করার একরকম আর দল করে কাজ করা আরেক রকম। এটা সত্যি যে দল করে কাজ করলে অনেক সুবিধা আছে । একেক জনের একেক আইডিয়া নিয়ে কাজ করা যায়। 

কিভাবে আপনার দক্ষতা অর্জন করে চলেছেন?

আমি সবসময় নতুন কিছু জানতে আর শিখতে পছন্দ করি। সাধারণত যখন গুগল অ্যালগরিদম আপডেট করে তখন আমাদের এসইওর জন্য সমস্ত terms and conditions শিখতে হয় । আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের টেকনিক গুলো প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে তাই এই ইন্ডাস্ট্রিতে ঠিক থাকতে হলে নিজেকে স্কিল্ড করা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে চলছি । সময়ের সাথে সাথে  নিজেকে আপডেট করে নিজের দক্ষতা বিকাশের চাইতে অন্য কোন ভালো কিছু হয় না । আমি মনে করি  এটাই হচ্ছে স্কিল বিকাশের সঠিক উপায়। 

ফ্রিল্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ দিকটি কী?

ফ্রিল্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ দিক বলবো না কিন্তু যে বিষয়টা না বললেই নয় তা হলো একজন ফ্রিল্যান্সারকে রাত জেগে কাজ করতে হয় এবং দীর্ঘ সময় চেয়ারে বসে থাকতে হয়। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সারদের শারীরিক কাজ বা মুভমেন্ট খুব কম হয়। তাই অনেকেই  পিঠে ব্যথার অনুভব করেন । আসলে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার কোন খারেপ দিক নাই । এতে সব দিক থেকে সুবিধা । 

আপনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, ক্লায়েন্টকে খুশি রাখতে ৩টি  টিপস দিন ?

১। সবসময় ক্লায়েন্টকে আপনার সেরাটা দেবার চেষ্টা করুন । 

২। ক্লায়েন্টের কাজ ডেডলাইনের আগে কমপ্লিট করে ডেলিভারি করে দিন । অর্থাৎ কাজ কমপ্লিট করার জন্য যতদিন সময় নিয়েছেন তার ২/১ দিন আগেই কাজটা কমপ্লিট করে জমা দিন । এতে ক্লায়েনটের মনে পজেটিভ থিঙ্কিং হবে , সেক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট নেক্সট প্রজেক্ট এর কাজটাও আপনাকে দেবার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।

৩। প্রজেক্ট  শেষ হওয়ার পরেও  ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ রাখুন। চুক্তি শেষ হওয়ার পরেও ক্লায়েন্টের প্রশ্নের উত্তর দিন। এটি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে আরও প্রজেক্ট পেতে সহায়তা করবে।

নতুনদের জন্য কোন পরামর্শ

প্রথমত, একটি বিষয়ে ভাল পদ্ধতিতে কাজ করা শিখুন, তারপরে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করুন! যে মানুষ সফল হয়েছে, তারা একদিনে সফল হতে পারেনি। সুতরাং আপনি যদি এটির সাথে লেগে থাকেন  তবে একদিন সাফল্য আসবেই  !!