যদি দ্রুত যেতে চাও তবে একা যাও, আর যদি অনেক দুর যেতে চাও, তাহলে দলগত ভাবে যাও। এটি একটি আফ্রিকান প্রবাদ এবং এই প্রবাদটি যাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে তার নামে হচ্ছে নাহিদ হাসান। যিনি একা শুরু করেছেন এবং বর্তমানে বিজকোপ নামের একটি ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। আজ আমরা তার কাছ থেকে শুনবো তার পথচলার কথা।
ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুর দিকের কিছু গল্প?
আমার শুরুটা আসলে ওডেস্ক নামের একটি মার্কেটপ্লেস দিয়ে। যা বর্তমানে আপওয়ার্ক নামে পরিচিত। ছাত্র জীবনের ব্লগিং এর সাথে টুকটাক জড়িত থাকার কারনে অনলাইন জগতের অনেক কিছুর সাথে পরিচিত ছিলাম, আর প্রচুর কৌতূহল এবং লেগে থাকার স্বভাব আমাকে আরও বেশি জানতে এবং শিখতে সহায়তা করতো। এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারি যে ওডেস্ক মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে অনলাইনে কাজ করে উপার্যন করা যায়। আর টুকটাঁক যতটুকু কাজ জেনেছি তা দিয়েই শুরু করার চেষ্টা করা এবং তা আল্লাহর রহমতে কাজে লেগে যায়।
শুরুটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
আমার শুরুটা আসলে অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল, এমন নয়। অথবা হয়তো চ্যালেঞ্জিং ছিল কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি। এর কারন হচ্ছে আমি প্রচুর পসিটিভ ভাবে ভাবতে পছন্দ করি। আমি খুবই ট্রান্সপারেন্ট এবং কফিডেন্ট ছিলাম যখন আমি শুরু করেছি। আমার এখনো মনে আছে, শুরুর দিকে যখন কোন জবে এপ্লাই করতাম ওডেস্কে, তখন আমি কাভার লেটারে লিখে দিতাম, আমি নতুন, আমি কুইক লার্নার, এবং আমি আপনাকে কনফিডেন্ট দিতে পারি যে আপনি যা চাচ্ছেন তা পাবেন, যদি না পান আমি আপনাকে কোন চার্জ করবো না, অথবা টাকা ফেরত দিব। আমার এই স্বচ্ছতা এবং কনফিডেন্ট ক্লায়েন্টদেরকে আমাকে কাজ দিতে সাহস যোগাতো, এবং আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এবং যা আমাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
আরও একটি ব্যাপার ছিল, সেটা হচ্ছে আমি সবসময় চিন্তা করতাম, পরবর্তি ধাপে যেতে হলে আমাকে কোন দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এবং আমি তা শেখার জন্য সময় ইনভেস্ট করতাম, প্রয়োজনে কাজ কম নিতাম। যা সেসময়ের উপার্জন কমিয়ে দিলেও যেহেতু নতুন কাজ শিখতে পেরেছি, তাই আমি বেশি বাজেটের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল।
টিম তৈরি করার বেপারটা কিভাবে মাথায় আসলো?
শুরু থেকেই আমি দলগত সফলতাতে বিশ্বাসী। আমার সব সময় মনে হয় যে কিভাবে আরো বেশি মানুষের কর্ম সংস্থান করা যায়। এই বেপারটা আমার মধ্যে এখনো আছে। তাই আমি চেষ্টা করেছি, এমন কে আছে যে আমার মত করে ভাবতে পারে। পসিটিভ মানুষ, পরিশ্রমী। কিভাবে আমরা একসাথে কাজ করে যেতে পারি। আমি এখনো টিম মেম্বার হায়ার করার ক্ষেত্রে সবার প্রথমে দেখার চেষ্টা করি যে যাকে হায়ার করছি, তাকে বিশ্বাস করা যায় কিনা? স্কীল একটু কম হলে শেখানো যাবে, কিন্তু ইথিক না থাকলে একসাথে কাজ করা যাবে না।
আপনারা এখন কী কী ধরনের সার্ভিস দিয়ে থাকেন?
আমরা মূলত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন, এবং কনটেন্ট রাইটিং সার্ভিস দিয়ে থাকি। আমাদের ৯৫ ভাগ ক্লায়েন্ট হচ্ছে গ্লোবাল মার্কেট থেকে। যার ২৫% আপোয়ার্ক থেকে এবং বাকি ক্লায়েন্ট ডিরেক্ট চ্যানেল থেকে। এছাড়াও আমরা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে জড়িত আছি। মূলত আমাজন এফিলিয়েশন। কিছুদিন হল ডিজিটাল প্রডাক্ট রিলেটেড এফিলিয়েট মার্কেটিং ক্যামেপেইন নিয়ে কাজ শুরু করেছি।
নতুন যারা এই সেক্টরে আসতে চাইছে তাদের জন্য কোন পরামর্শ?
কমিউনিকেশন স্কীল ডেভেলপ করার পরামর্শ দিব। সেলস এবং মার্কেটিং স্কীল ডেভেলপ করার পরামর্শ দিব। প্রফেশনাল লাইফে এই স্কীল গুলো ডেভেলপ করতেই হবে। অন্যথায় এগিয়ে যাওয়া কষ্ট হয়ে যাবে। অনেকেই প্রচুর কাজ জানার পরেও কাজ পায় না। কারন, তার সেলস এবং মার্কেটিং এর দক্ষতা নেই। কমিউনিকেশন স্কীল ভাল না। নেগসিয়েশন স্কীল ভাল না।
এছাড়া কাজ শেখার নেশা তৈরি করতে হবে। সবসময় চিন্তা করা যেতে পারে, এর পর কী? কিভাবে যাওয়া যায়। কিভাবে নিজেকে আরও ডেভেলপ করা যায়। প্রতিদিন একটু একটু ইম্প্রুভমেন্ট আসলে অনেক দুর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আমি নতুনদের জন্য প্রতিনিয়ত কনটেন্ট তৈরি করি আমার GrowWithNahid.com ব্লগটিতে। আপনারা আপনাদের স্কীল গুলো অন্যকে শিখতে সহায়তা করতে পারেন। যা নিজের স্কীল ডেভেলপমেন্টেও অনেক ভূমিকা রাখে।