আমরা নাজমা আক্তার এর সাথে কথা বলে জানতে চেয়েছিলাম কিভাবে তার এই ফ্রিল্যান্স জীবন শুরু হয়। তিনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে শুরু করেছিলেন। তার প্রথম পছন্দ কিন্ত ফ্রিলান্সিং ছিল না। তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন এর আগে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। প্রথম দিকে চাকরি করতে ভালো লাগলেও কিছুদিন পর বাচ্চাদের রেখে চাকরি করতে আর ভালো লাগছিল না। তাই আমি ভাবছিলাম চাকুরি ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনভাবে কিছু করার জন্য। কিছুদিন যাবত ফ্রিল্যান্সিং এর কথা কানে আসছিল। একদিন অফিস থেকে আসার সময় ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক একটি লিফলেট চোখে পড়ল। বাসায় এসে আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করি। পরবর্তীতে আমি গ্রাফিক্সস ডিজাইনে একটি কোর্স করি। কোর্স কমপ্লিট করার পর আমি আপ ওয়ার্কে একটা একাউন্ট খুলি। আমি যে কাজগুলো পারি প্রথমে সেই কাজগুলো করতে থাকি। আমি প্রথমে একটা ৫ ডলারের কাজ পাই সেই কাজটা অনেক ভয়ে ভয়ে করে ডেলিভারি দেই। আমার কাজ টা ক্লায়েন্টের পছন্দ হয়। তারপর আমার কনফিডেন্ট বেড়ে যায়।

নাজমা আক্তার যে ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো করে থাকেন

ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে অনেক ক্যাটাগরির কাজ রয়েছে , যেমন  ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এস ই ও, এস ই এম , কন্টেন্ট রাইটিং , আরও অনেক অনেক কাজ রয়েছে মার্কেটপ্লেসে । যার যে বিষয়ে ইচ্ছা অথবা ইন্টারেস্ট আছে সে বিষয়ে কাজ করতে পারেন । তবে হ্যা তাকে অবশ্যই কাজ ভালো করে কাজ শিখে আস্তে হবে । তেমনি ভাবে তার ইন্টারেস্ট ছিলো গ্রাফিক্সে  তাই তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর একটি কোর্স করে কাজ শুরু করেন ।  তার সাথে কথা বলে আমরা জেনেছি , আমি মূলত গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে কাজ করে থাকি । ফটো এডিটিং, ফটো  রিটাচিং, কালার কারেকশন নিয়েই সাধারণত কাজ করা হয় আমার ।

সাধারণত আপনি কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন 

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য মার্কেটপ্লেসে  অনেক গুলো সাইট রয়েছে আপ ওয়ার্ক , ফাইভার ,ফ্রিল্যান্সার এরকম আরো অনেক । তবে এর  মধ্যে আমি প্রথম থেকেই  মূলত আপ ওয়ার্কে কাজ করে থাকি।  ফাইভারে এখন পর্যন্ত কম্ফোরট হতে পারিনি । তবে আমি আপ ওয়ার্কে কাজ করে খুব স্বাচ্ছন্দ্য ফিল করছি । আমার মনে হয় এখানে ক্লায়েন্টরা অনেক হেল্পফুল । তাই আমার আপ ওয়ার্কে কাজ ই বেশি হয় । হ্যা  আমি মার্কেটপ্লেসের বাইরে ও কিছু ক্লায়েন্টের কাজ করে থাকি।

ফ্যামিলি এবং ফ্রিল্যান্সিং লাইফ কিভাবে মেইনটেইন করেছেন

আসলে নতুন এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ফ্রিলান্সিং লাইফ শুরু হয়। ফ্রিল্যান্সিং করাটাও প্রথম দিকে আমাদের মেয়েদের জন্য একটু কষ্টকর। বাসায় বসে কাজ করতাম বলে অনেকেই ভাবতেন যে ফ্রি আছি। ফ্যামিলি সংসার কাজ একসাথে ম্যানেজ করা একটু টাফ ছিল। প্রথম দিকে অনেক সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। বর্তমানে খুব সুন্দরভাবে রুটিন অনুযায়ী আমার কাজ এবং ফ্যামিলি ২ টাই মেইন্টেইন করছি। আমি মনে করি শুরুতেই যদি আমরা একটা রুটিন করে ফেলি আমাদের কাজ আর ফ্যামিলির কাজ নিয়ে তাহলে হয়ত আর তেমন কোন প্রব্লেম ফেইস করতে হয় না। 

ফ্রিল্যান্সিং করে আপনি কতটুকু হ্যাপি

ফ্রিল্যান্সিং করে আমি অনেক বেশি খুশি যা আমি আগরে জবটা করেও ছিলাম না। ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা আছে যা আমি এখন ফিল করছি। ঘরে বসেই কাজ করা যায়, যেকোন সময় যেকোন জায়গায় বসে কাজ করা যায়। অফিস যাবার জন্য কোন প্রিপারেশন লাগে না, যাতায়াতের জন্য এক্সটা কোন টাইম লাগে না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় ঘরে পরিবার বাচ্চা কাজ সব কিছু চোখের সামনে রেখে কাজ করা যায়। তাই আমি বলবো ফ্রিলান্সিং ই বেষ্ট প্রফেশন। 

মেয়েদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং রাইট চয়েজ কেন?

নাজমা আক্তারআমাদের দেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েদের কে ঘরের  বাইরে যেয়ে কাজ করাটা অনেক পরিবারই একসেপ্ট করে না। অনেক পরিবার ভাবতেই পারে না মেয়েরা বাইরে গিয়ে কাজ করবে। অনেক পরিবার থেকে মানলে ও দেখা যায় যে যারা বিবাহিত তারা তাদের বাচ্চাদের জন্য জব করতে পারে না। সেক্ষেত্রে মেয়েরা ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করাটাকে আমি রাইট চয়েজ মনে করব। এক্ষেত্রে আমাদের মেয়েদের ক্যারিয়ার ও বিল্ডাপ হোল আবার ঘরে ও থাকা হোল। ফ্রিল্যান্সিং করাটা আসলে ট্রেডিশনাল জবের চাইতে অনেক ভালো । আমি চাইব মেয়ে রা ফ্রিল্যান্সিং এ যেন বেশি জোর দেয় । ঘরে বসে যদি সম্মানজনক জব করা যায় তাহলে কেন এতো কস্ট করে বাইরে যেতে জব করতে হবে । এছাড়া আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সারা পৃথিবী অনলাইনে ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পরবে । তো এখন ই সময় অনলাইনে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিগ করবার । 

ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে যেসব স্কিল থাকা প্রয়োজন 

আমরা যে কোন বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করি না কেন আমাদেরকে ওই বিষয়টা সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করতে হবে। ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে ডিজাইন সম্পর্কিত ভালো  ধারনা থাকতে হবে। যদি কোন ইমেজ ডিজাইন করি তাহলে ইমেজটা দিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছি তার ধারনা থাকতে হবে। যদি রাইটার হয় তাহলে তাকে খুব ভালো লেখার স্কিল থাকতে হবে। অনেক বেশি আর্টিকেল পড়ার স্কিল থাকতে হবে। নিজে থেকে ইউনিক লিখার অভ্যাস থাকতে হবে। এরকম প্রতিটা বিষয়ে রিসার্চ করার স্কিল থাকতে হবে। ক্লায়েন্ট এর সাথে কমিউনিকেশন  স্কিল থাকতে হবে। ক্লায়েন্ট কি চাচ্ছে টা বুঝতে হবে , আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি সেটা ক্লায়েন্টকে ক্লিয়ারলি বঝাতে হবে । সবসময় নিজেকে আপ টু  ডেট রাখতে হবে । নতুন নতুন টুলস ব্যবহার করে নিজের স্কিল বারাতে হবে । নিজেদের কাজ কে অনেক বেশি স্মার্ট করতে হবে , নিজেদের স্কিল দিয়ে প্রব্লেম এর স্মার্ট সলিউশন  বের করতে হবে । 

ক্লায়েন্টকে খুশী রাখার জন্য আপনি কিভাবে কাজ করে থাকেন 

ক্লায়েন্টকে খুশী  রাখাটা তার কাছে  তেমন কঠিন মনে হচ্ছে না । তিনি মনে করেন  ক্লায়েন্ট এর সাথে রেগুলার কমিউনিকেট করা। তার কাজের রেগুলার আপডেট দেয়া। ডেডলাইন মেইন্টেইন করতে হবে। যদি পারা যায় ডেডলাইনের আগে কাজটা কমপ্লিট করে ডেলিভারি দিতে পারা । এরকম কিছু কাজ করলেই ক্লায়েন্ট খুশি থাকবে । আর যদি হ্যাপী থাকে তাহলে ক্লায়েন্টের পরবর্তী অনেক প্রজেক্ট ই আপনি পেতে পারেন । প্রজেক্ট শেষ হয়ে গেলেও তার সাথে কানেক্ট থাকা । ক্লায়েন্টের সাথে একটা পার্সোনাল রিলেশন তৈরী করা । এতে ক্লায়েন্ট অনেকটাই হ্যাপি থাকে । যা আমাদের কাজের জন্য পজিটিভ সাইন হতে পারে । 

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

নতুনদের জন্য তিনি জানিয়েছেন , যারা নতুন করে শুরু করবেন তারা কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই ভালো করে শিখে নিবেন। শিখার আগে কোন ভাবেই কাজ শুরু করা যাবে না। কভার লেটারটা অবশ্যই সুন্দর করে সাজিয়ে লিখতে হবে। কভার লেটারে যেনো তার  কাজ সম্পর্কে একটা ধারনা দিয়ে দেয়  যাতে করে ক্লায়েন্ট বুঝতে পারে আপনি কি কি নিয়ে কাজ করছেন। ক্লায়েন্ট এর কাজের রিকয়ারমেন্ট নিয়ে  রিসার্চ করতে হবে ।