একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের কথা যিনি ২০১৪ সালে তার ফ্রিল্যান্সিং কারিয়ার শুরু করেছিলেন । আজকে তার এই ফ্রিল্যান্সিং জীবনের শুরুর দিকের কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করব । 

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের পথচলা   

২০১৪ সালে  ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করি । আমি একাউন্টিং নিয়ে কাজ করছি । আপওয়ার্ক (Upwork) থেকে ইনিশিয়ালি কাজ শুরু করেছিলাম  । তারপর ২টা কোম্পানির সাথে পার্মানেন্টলি রিমোট জবে সিলেক্ট হই। ওই কোম্পানির সাথেই আমি আমার টিম নিয়ে ওদের একাউন্ট ডিপার্টমেন্ট হ্যান্ডেল করছি । তার পাশাপাশি আপওয়ার্কে একাউন্ট নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করছি । বর্তমানে আমি আপওয়ার্কে একাউন্টিং নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করছি ।  

ফ্রিল্যান্সিং একাউন্টেন্ট  প্রফেশনাল হিসেবে যেসব দক্ষতা প্রয়োজন

একাউন্ট নিয়ে যদি কেউ ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করতে চায় তাহলে একাউন্ট রিলেটেড বেশ কিছু সফটওয়ার আছে যেমন কুইক বুক (quick book),  পেরোল (payroll)  , etc এগুলো সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে জানতে হবে । একাউন্টিং বেকগ্রাউন্ড হলে + পয়েন্ট ,তবে  একাউন্টিং বেকগ্রাউন্ড না হলে ও পসিবল । আমি ম্যাথম্যাটিকস থেকে একাউন্টিং নিয়ে কাজ করছি।  একাউন্ট রিলেটেড সফটওয়্যার গুলো এবং একাউন্টিং এর বেসিক স্কিল গুলো ইউটিউব টিউটোরিয়াল বা IT রিলেটেড কোন প্রতিষ্ঠান থেকে শিখে নিতে পারেন । 

কারো উপর নির্ভরশীল না করে নিজে স্বাধীন ভাবে কিছু করার ইচ্ছায় তিনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন । আমাদেরকে তিনি জানিয়েছেন অন্য কোন জব না করে কেনো তিনি ফ্রিল্যান্সিং করছেন । 

কেন ফ্রিল্যান্সিং করছেন 

আমি যখন স্টুডেন্ট (Student) ছিলাম তখন থেকেই আমি ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করি । প্রকৃতপক্ষে, আমি স্বাধীন ভাবে কিছু করতে চেয়েছিলাম । কারো আন্ডারে থেকে আমি কোন কাজ করতে চাচ্ছিলাম না । ফ্রিল্যান্সিং করলে সাধারণত আমি আমার স্বাধীন মতো যেকোনো সময় কাজ করতে পারতাম। ল্যাপটপ আর নেট কানেকশন থাকলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করা যায় । আমার মনে হয় ফ্রিল্যান্সিং করলে ট্র্যাডিশনাল জবের চাইতে আর্নিং বেশী হয় । সেক্ষেত্রে আমি সবকিছু মিলিয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে প্রেফার করেছি । আর এজন্যই ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছি ।Jewel Rana

আপনার ফ্রিল্যান্সিং জার্নি কতটা কঠিন ছিল

আমার জার্নিটা স্ট্রাগল এর মধ্যেই ছিল । আমি যখন  গ্রাজুয়েশন করছিলাম তখন আমাকে আমার ফ্যামিলি থেকে টাকা নিতে হতো । আমার কাছে এই বিষয়টা খুব একটা ভালো লাগত না । তাই আমি ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করেছি । শুরুতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল জব পাওয়ার জন্য সারারাত কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতাম । আমি জব এপ্লাই করে রাতের পর রাত বসে থাকতাম  রিপ্লাই পাবার আসায় । আমি প্রায় ৬ মাস স্ট্রাগল করার পর ওডেস্কে একটা জব পাই । জব পাবার পর ও আমাকে অনেক স্ট্রাগল করে কাজ কমপ্লিট করতে হয়েছিল । আসলে শুরুর দিকটা আমাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছিল । কিন্তু এখন অনেকটাই স্মুথ হয়ে গেছে । আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি আমার ফ্যামিলিকে সাপোর্ট  করতে পারি ।  

আপনার কাজের অনুপ্রেরণা কি ছিল 

জাহিদুল ইসলাম জাহিদ নামে একজন বড় ভাই তিনি  ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য অবগত করেছিলেন, প্রথম দিকে  আমি তার সাথে কাজ করেছিলাম তিনি আমাকে ফ্রিল্যান্সিং এর সকল কাজ সম্পর্কে জানিয়েছেন । বিয়ের পর আমার স্ত্রী আমাকে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য অনেক ইন্সপায়ার করেছিলেন। 

আপনার কাজগুলো কোন মার্কেট প্লেসে থেকে পেয়ে থাকেন

আমি একটা মার্কেট প্লেসেই কাজ করে থাকি । আমি প্রথম থেকেই ওডেস্কে (Odesk) (যেটা বর্তমানে আপওয়ার্ক নামে পরিচিত ) কাজ করে থাকি । অন্য কোন মার্কেটপ্লেসে কাজ করা হয়ে ওঠেনি ,কারন আমি যখন ওডেস্কে  প্রথম কাজ করতে শুরু করি আমি কাজ করে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলাম এজন্য আর অন্য কোন মার্কেটপ্লেসে  কাজ করা হয়নি  । আমার  আপ ওয়ার্কে একটা প্রোফাইল আছে । আর আমিও যেকনো এক জায়গাতেই কাজ করে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি ।

কিছু টিপস যা ক্লায়েন্ট কে হ্যাপি রাখতে সহায়তা করবে

আমরা যেখানেই কাজ করি না কেন যদি বস কে খুশি রাখি তাহলে আমরা কিন্তু লাভবান হতে পারি । তেমনি ফ্রিল্যান্সিং করার সময় ও যদি আমরা ক্লায়েন্টকে খুশি রাখতে পারি তাহলে আমাদের জন্য পজিটিভ হবে । তার মতে ক্লায়েন্টকে খুশি রাখার জন্য তেমন কঠিন কিছু করতে হবে না । 

আসলে ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে আমাদের কে বেশ  কিছু  জিনিস মাথায় রাখতে হবে যেমন :

প্রথমত আমাদেরকে লয়াল (loyal) হতে হবে । আপনি ক্লায়েন্টের যে  কাজ টা নিবেন সে কাজ টা সঠিক ভাবে কমপ্লিট করতে হবে । নিজেকে fare রাখতে হবে । কেউ যদি চিন্তা করে যে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোনরকম কাজ করে দিবে তাহলে বেশিদিন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে স্থায়ী হতে পারবে না । একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রফেশনালিজম থাকতে হবে । নিজের কাজটা মনযোগ দিয়ে করতে হবে ।  কমিউনিকেশন   স্কিল বাড়াতে হবে । যতদ্রুত সম্ভব ক্লায়েন্টের ম্যাসেজের রেসপন্স করতে হবে । এতে আপনার প্রতি ক্লায়েন্টের একটা পজেটিভ থিঙ্কিং ক্রিয়েট হবে । যার কারণে পরবর্তীতে আপনি ওই ক্লায়েন্টের অন্য প্রোজেক্ট এর কাজ ও পেতে পারেন । এবং ক্লায়েন্টের  কাজ কমপ্লিট করার পর ও তার সাথে যোগাযোগ রাখুন তাহলে দেখা যায় অনেক সময় আপনাকে তিনি অন্য কোন প্রোজেক্টে ইনভল্ভ (Involve) করবেন । এভাবেই তার সাথেই একটা লং টার্ম রিলেশন হবে ।

নতুনদের জন্য কিছু টিপস     

নতুনদের জন্য বলবো আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার  বিল্ড আপ করতে চান তাহলে অবশ্যই যে কোন একটা ক্যাটাগরিতে এক্সপার্ট হয়ে আসেন । যেকোনো একটা বিষয়ে যদি এক্সপার্ট হয়ে আসেন তাহলে কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রবলেম হবে না । 

এবং আপনাকে মেন্টাল ভাবে স্ট্রং থাকতে হবে , আমাদের সমাজে ফ্রিল্যান্সিংটা কে অনেকেই তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না । সেক্ষেত্রে নিজেকে স্ট্রং রেখে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে কাজ করতে হবে । 

যারা ফ্রিল্যান্সিং করে আর্ন করবেন সব টাকা খরচ না করে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখেন । তাহলে আপনি পরবর্তীতে যদি উদ্যোক্তা হবার ইচ্ছা থাকলে সেই জমানো টাকা ইনভেস্ট করতে পারবেন