ডিজাইন, লেখালেখি বা মার্কেটিং যে কাজেই ক্যারিয়ার করুন না কেন, প্রয়োজনীয় টুলসের ব্যবহার আপনার ফ্রীলান্সিং জার্নিকে অনেকটাই সহজ করে দিবে। ফ্রীলান্সিং পেশার বিসেসত্ত হল, এখানে আপনাকেই পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হয়। অর্থাৎ, কাজ খুঁজে পাওয়া থেকে ক্লায়েন্তের কাছে কাজ দেলিভার পর্যন্ত খুঁটিনাটি জত বিষয় আছে, সবকিছুই আপনাকে প্রফেশনালি হ্যান্দেল করতে হবে। আর ফ্রীলেন্সার হিসেবে / ফ্ররলেন্সিং এ প্রফেশনালিজম হল কাজ দ্রুত, নিরাপদ ও সহজ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা। 

স্মারতলি সবকিছু গুছিয়ে করার জন্য প্রয়োজন কিছু আনুষঙ্গিক টুলসের। 

ফ্রীলান্সিং ব্যবসায় আপনাকে এমন কিছু/ আপনি ফ্রীল্যান্সার হিসেবে একা কাজ করেন বা কোন এজেন্সি নিয়ে, ঠিকঠাক টুলসের ব্যবহার ব্যবসা বৃদ্ধি করতে এবং কাঙ্ক্ষিত সফলতায় সাহায্য করবে।

ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ বা কাজের পেমেন্ট নেয়ার জন্য ইনভয়েস তৈরি, ফ্রীল্যান্সিং এর সাথে জড়িত এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করি এবং সাকসেসফুল ফ্রীল্যান্সারদের রিভিউ অনুযায়ী ফিচারসমৃদ্ধ সফটওয়্যার,

যোগাযোগ যখন সবকিছু

ফ্রীল্যান্সিং পেশায় আপনি বাংলাদেশে বসেও স্প্যানিশ বা ক্যানাডিয়ান ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে, ভউগলিক দূরত্ব আর ভাসাগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে সফলতার সাথে কাজ করার মূল হাতিয়ার সঠিক যোগাযোগ চ্যানেলের ব্যবহার। 

ফ্রীল্যান্সারদের চলতি প্রজেক্টর অনবরদিং থেকে সেশ হওয়া পর্যন্ত নতুন ও পুরাতন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখতে হয়। ঝামেলার এ কাজকে সহজ করেছে গুগলের মিট, জিমেইল,এবং জুম, স্কাইপে, ক্লিক, ক্রাউডভিউ এর মত অত্যাধুনিক ফিচারসম্রিদ্ধ টুলসগুলো। প্রাইভেসি, লাইভ কমুনিকেশন, স্টোরেজ,টিম অপশন ইত্যাদি বিবেচনায় সেরা কিছু যোগাযোগ মাধ্যম,

জুম (Zoom)

বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত কমুনিকেশন টুলস জুম। মূলত ভিডিও মিটিং সুবিধা দিয়ে পরিচিতি পেলেও যেকোনো টিম মিটিং এর জন্য জুম ের জুড়ি মেলা ভার। ফ্রি এবং পেইড দুই ভার্সনেই এটা ব্যবহার করা যায়। জুম ের উল্লেখযোগ্য কিছু ফিচার,

১) যেকোনো ডিভাইস থেকে অংশগ্রহন

২) গপনিয়তা রক্ষার্থে অত্যাধুনিক সিকিউরিতির ব্যবহার

 ৩) এইচডি কোয়ালিটির অডিও, ভিডিও সুবিধা

৪)  বিল্ট-ইন রেকর্ডিং ও ত্রান্সকিপ্ত

৫) গ্রুপ চ্যাট, ওয়ান টু ওয়ান মেসেজিং সুবিধা

৬)গুগল ক্যালেন্ডার, আউটলুকের সাথে সিঙ্কিং সুবিধা

ফ্রিল্যান্সারদের যোগাযোগ সংক্রান্ত যে কোন ইস্যুর জন্য জুম মোটামুটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

মিট/স্কাইপে (Meet/Skype)

সিকিউরিটি ফিচারে গুগলের মিট উল্লেখযোগ্য। কেবলমাত্র গুগল একাউন্ট দিয়েই ফ্রীল্যান্সাররা মিট ব্যবহার করতে পারেন। গুগলের  অন্যান্য আয়প্লিকেশনের সাথে সিঙ্কিং এবং উইজার পারমিশন , লাইভ স্ত্রিমিং সুবিধা সহ গুগল মিট হতে পারে ফ্রীল্যন্সারদের প্রতিদিনকার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।

এছাড়া নতুন ফ্রীল্যান্সারদের  জন্য সহজ ইউজার ইন্টারফেসের মাইক্রোসফট স্কাইপেও অত্যন্ত কার্যকরী চ্যানেল। 

আইনি বিষয়/চুক্তি

ফ্রীল্যান্সাররা যেহেতু সরাসরি কোন অর্গানাইজেশনের অধীনে কাজ করেনা তাই বিভিন্ন আইনসংক্রান্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। যেমন, যেকোনো প্রজেক্ট শুরু করার আগে সংশ্লিষ্ট টারমস এন্ড কন্ডিশনগুলো খুব ভালভাবে জেনে নেয়া যেন পরবর্তীতে কোন আইনি ঝামেলায় পড়তে না হয়। 

 এক্ষেত্রে, খুব কমন ভুলের অন্যতম, কোন লিখিত কন্ট্রাক্ট ছাড়া কাজে রাজি হওয়া। অথচ, লিখিত চুক্তি দক্ষ ফ্রীল্যান্সারদের ব্র্যান্ড হিসেবে যেমন প্রথিস্থা পেতে সাহায্য করে তেমনি, আইনি অধিকার রক্ষায় সাহায্য করে।

ফ্রীল্যান্সারদের বিভিন্ন লিগ্যাল ইস্যুতে ব্যবহারের জন্য সেরা কিছু টুলস হল,

টার্মসফিড/ এন্ডকো (Termsfeed)

সার্ভিস/প্রোডাক্ট ক্রয়ের সময় বিভিন্ন টার্মস নিয়ে মাথা না ঘামালেও  ফ্রীল্যান্সিং এ সেলার হিসেবে ফ্রীল্যান্সারদের সার্ভিস সংশ্লিষ্ট কিছু তারমস এন্ড কন্ডিশন তৈরি করতে হয়। তারমসফিড ব্যবহার করে আপনি সহজেই লিগ্যাল ডকুমেন্টেশন, প্রাইভেসি পলিসি, বিভিন্ন সার্ভিস/প্রোডাক্টের টার্মস এন্ড কন্ডিশন, রিটার্ন পলিসি ইত্যাদি বানাতে পারবেন। তারমসফিডে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন প্রি -মেড টেম্পলেট পাওয়া যায়।

এন্ডকোতে টার্মসফিডের মত সুবিধাগুলোর পাশাপাশি রয়েছে সময় এবং ব্যয় ব্যবস্থাপনা সহ ইনভয়েসিং সুবিধা। বাজেট ফ্রীল্যান্সারদের জন্য স্বস্তিদায়ক হল এ সুবিধাগুলো ফ্রিতেই পাওয়া যায়!  আবার এতে ফিভারের সাথে ইন্তিগ্রেশনের সুবিধাও রয়েছে। 

প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট

 ফ্রীলান্সিং বিজনেসে প্রায়শই একাধিক প্রজেক্টের কাজ একইসাথে করতে হয়। 

বিভিন্ন ক্লায়েন্টেদের ভিন্ন কাজের রিকয়ারমেন্ট, ডেডলাইন, সম্ভাব্য ফলাফলের মত জটিল বিষয়গুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য দরকার সঠিক প্রজেক্ট ম্যনেজমেন্ট প্রসেস অনুসরণ করা।

প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের সফটঅয়ার মূলত এধরনের প্লাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার সব প্রজেক্ট, সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এক জায়গায় সংরক্ষন করতে পারেন। ফলে, সময়মত কাজের ডেলিভারি দেয়া বা কোন গুরুত্বপূর্ণ ইন্সট্রাকশন থাকলে টা ফলো করতেও ঝামেলা পোহাতে হয়না।

সময়মত যোগাযোগের জন্য মেইল পাঠানো, টিমের অন্যান্যদের সাথে কলাবরেট করা বা ওয়ার্ক প্রগ্রেস যাচাইএর মত নানামুখী কাজে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুলস সাহায্য করে।

আসানা (Asana)

বিভিন্ন ধরণের ফিচার সমৃদ্ধ আসানাকে এক কথায় ফ্রিল্যান্সারদের অল ইন ওয়ান হেল্পিং হ্যান্ড বলা যায়। নিজের ব্যক্তিগত বা ক্লায়েন্টদের প্রজেক্ট হ্যান্ডএল করার জন্য আপনার জা জা প্রয়োজন তার মোটামুটি সবকিছুই পাবেন এখানে। 

 আসানা মূলত টাস্ক ডেভেলপমেন্ট, ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত সল্যুশনের জন্য বিখ্যাত। আসানার অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে,

১) পোর্টফলিও তৈরি করা

২) এডভান্স সার্চ এবং রিপোর্ট তৈরি

৪)ফর্ম, রুলস, মাইলস্টোন ক্রিয়েশন

৫) কাস্টম ব্রেন্দিং এবং প্রায়োরিটি সাপোর্ট

৬) প্রাইভেট টিম এবং প্রজেক্ট যুক্ত করা

৭) আনলিমিটেড ফাইল স্টোরেজ সুবিধা

আসানার বিভিন্ন ফিচার অনেকসময় সাধারন ব্যাবহারের জন্য অতিরিক্ত মনে হয়। তাই বেস্ট ওয়ে হচ্ছে আপনার চাহিদা অনুযায়ী কাস্তমাইজ করে নেয়া।  

ট্রেলো (Trello)

বোরিং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার থেকে আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে ট্রেলো। চমৎকার ভিজুয়াল ইন্টারফেস আর সিম্লিসিতির জন্য ট্রেলো ফ্রীল্যান্সারদের অন্যতম পছন্দের টুলস।

ট্রেলোর ইন্টারেস্টিং দিক হচ্ছে ের ব্যবহারের ভিন্নতা। বড়, ছোট যে কোন আকারের প্রোজেক্ট, টিম বা অর্গানাইজেশন ডিজিটালি ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি ভ্যাকেশন প্লানিং, ক্রিসমাস পার্টির প্রস্তুতি বা আপনার হোম রিনভেশনের মত বিচিত্র বিষয়েও ট্রেলোর ব্যবহার এনে দিতে পারে পরিকল্পনায় ভিন্নতা।

ইনভয়েসিং টুল (Invoicing tools)

ফ্রীল্যান্সাইং বিজনেসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুলস হল ইনভয়েসিং সফটওয়্যার। নবীন ফ্রীল্যান্সার বা বড়সড় টিম নিয়ে এজেন্সি, আপনি যেভাবেই কাজ করেন না কেন পেমেন্ট নিশ্চিত করার জন্য সঠিক মাধ্যম ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক আদান-প্রদান নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ফিচারসহ টুল বাছাই করা কিছুটা ভেজালদায়ক হলেও সাধারণ কিছু টিপসের অনুসরণ সাহায্য করবে অনেকটাই।

ক্লাউড বেস সফটওয়্যার ব্যবহারের অন্যতম দিক হলো সহজেই প্রফেশনাল ইনভয়েস তৈরি করে ক্লায়েন্টকে ইমেইলে পাঠাতে পারবেন। 

এছাড়া সম্ভাব্য টুলসে নিচের অপশনগুলো আছে কিনা তাও দেখতে পারেনঃা

১) পেমেন্ট এবং ফিনান্স সল্যুশনঃ ইনভয়েসিং এবং অন্যান্য ফাইনান্স সংক্রান্ত ইস্যুতে আলাদা আলাদা টুলসের ব্যবহার মোটেও স্মার্ট চয়েজ না। তাই ক্লায়েন্ট পেমেন্ট, ইনভয়েস, একাউন্টস, ট্যাক্স সল্যুশন ইত্যাদি একইজায়গায় ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে এমন প্লাটফর্ম সিলেক্ট করা।

২)রিপোর্টিংঃ ফিনান্সিয়াল ডকুমেন্ট, মাসিক – বাৎসরিক রিপোর্ট, স্টেটমেন্ট, সম্ভাব্য দেনা-পাওনা, আয়- ব্যয়ের সামারি ইত্যাদি তৈরির সুবিধা রয়েছে কিনা।

৩) অনলাইন পেমেন্টঃ পেয়নিয়ার, পেপ্যাল, স্ত্রাইপ বা ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং  অর্থাৎ অনলাইন পেমেন্ট ব্যবহারের অপশন ফ্লেক্সিবল কিনা তাও দেখতে হবে। 

৪)  ট্র্যাকিংঃ আওয়ারলি বেসিস এ কাজ করা প্রজেক্টের পেমেন্টের ক্ষেত্রে টাইম ট্র্যাকিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই সফটওয়্যারে টাইম ট্র্যাকিং অপশন আছে কিনা তাও বিবেচ্য ।

প্রোডাক্টিভিটি বৃদ্ধিতে

একজন ফ্রিল্যান্সার নিজের পছন্দমত প্রজেক্ট বাছাই করে কাজ করতে পারে। ফলে, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুবিধা যেমন আছে আবার সুপারভিশনের অভাবে কাজের গুনগতমান নষ্ট হওয়ার আশংকাও থাকে। তাই প্রোডাক্টিভিটি বজায় রেখে মান-সম্মত  কাজ ডেলিভারি দেয়া ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। 

যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসে আপনি নিজেই সবকিছুর জন্য দায়ী তাই ফোকাস ধরে রাখার জন্য  প্রয়োজনীয় সবকিছুর দিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন।