তৌহিদ রাহমান আপওয়ার্কের একজন টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার। তিনি বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার এবং এন্টারপ্রেনার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

কিভাবে শুরু করা

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে তৌহিদ রাহমানের জানাশোনা ছিল ভার্সিটি লাইফ থেকে। তার কলেজ লাইফের পুরো সময়টুকু তিনি গ্রামে অতিবাহিত করেছেন।  ঢাকায় এসে স্যাটেলড হয়ে এরপর তিনি ফ্রিল্যান্সিং লাইনে ক্যারিয়ার গড়েছেন। তিনি প্রথমে ২০০৯ সালে কলসেন্টার এ জব নিয়ে শুরু করেন। ভার্সিটি লাইফ শেষে মুলত ফ্রিল্যান্সিং এ ফোকাসড হন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “২০০৯ সাল থেকে আমার শুরু করা। সে সময় আমি ফাইনানশিয়াল ব্যাক আপ এবং পারসোনাল নিডের জন্য জব খোঁজা স্টার্ট করি। কিন্তু ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট থাকা কালীন সে সময় পার্ট টাইম জব অপরচুনিটি কম ছিল। এরপর আমি কলসেন্টার এ জব পোস্ট দেখতে পাই এবং সেখানে আগ্রহী হই। সে সময় ইন্টারন্যাশনাল কল সেন্টারে নাইট শিফট কাজের সুযোগ ছিল। যেহেতু ইউনিভার্সিটি আছে, তাই সকালে ক্লাস করে রাতে কাজ করতে পারবো, এরকম চিন্তা থেকেই এখানে শুরু করা।”

শুরুর পথচলা

তৌহিদ রাহমানের শুরুর জার্নি একদম সহজ ছিল না। যেহেতু, কল সেন্টারে জয়েন করেছেন এবং সেখানে প্রপার কমিউনিকেশন স্কিল এর দরকার হয়, তাই শুরুতে মানিয়ে নিতে তার সমস্যা হয়েছিল। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে এর উত্তরে বলেন, “আমার পড়াশোনা গ্রামে। কলেজ পর্যন্ত গ্রামে পড়াশোনা করেছি। যার কারনে ঢাকায় এসে ইংলিশ বলাটা এবং শিখাটা আমার জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু আমি ফোকাসড ছিলাম যে যেই করে হোক আমাকে এই অপরচুনিটি কাজে লাগাতে হবে। লাকিলি ইন্টারভিউতে সিলেক্ট হয়ে গেলেও কাজে প্রচুর সমস্যা হয়। সেখানে ডিরেক্ট কনভারসেশন মেক করাটা অনেক কঠিন ছিল। তাই আমাকে প্রচুর স্ট্র্যাগল করতে হয়।”  

“এরপর শুরুর তিন মাস আমি তেমন বেতন পাই নি। প্রথম জবটিতে কোম্পানিটি এক মাস পরে বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় জবটিতে প্রায় দুই মাস জব করার পরে ৩৫০০ টাকা স্যালারি পাই। সেটি ও কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। তৃতীয় যেই জবটিতে জয়েন করি, সেখানে স্ট্যান্ডার্ড স্যালারি নিয়ে কন্টিনিউ করতে থাকি এবং সাথে ইংলিশ প্র্যাকটিস করতে থাকি।”

“ঐ সময়টাতে সপ্তাহে ছয়দিন অফিস করে এসে দুই তিন ঘন্টার ঘুমে ক্লাস জয়েন করতে হতো। এর মাঝে বেশ কিছু দিন না ঘুমিয়ে সকালে লাইব্রেরি তে বসে এক্সাম এর প্রিপারেশন নিয়ে এক্সাম দিতে হয়েছে। যেহেতু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তে ৯০% এটেনডেন্স মেইন্টেইন করতে হতো, তাই এই দুই তিন ঘন্টার ঘুমে অফিস এবং ক্লাস সবগুলো চালিয়ে নিতে হতো। এরকম ব্যস্ত সময়ের মধ্য দিয়ে লাইফ চলছিলো। মুলত ইউনিভার্সিটির ফুল টাইমটিতে আমি কল সেন্টার জবের সাথে জড়িয়ে ছিলাম। ভার্সিটি শেষে আমার ধীরে ধীরে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার এ শিফট হওয়া।”

ফ্রিল্যান্সিং এ যে তার অনুপ্রেরণা

“ফ্রিল্যান্সিং এ আমার অনুপ্রেরণা হচ্ছে ডেফিনেটলি আমার ফ্যামিলি। স্পেশালি কোন নাম মেনশন করতে বললে প্রথমত আমার বাবার কথা আগে আসবে। তিনি আমার কোন কাজে বাঁধা দিতেন না। এরপর গ্রাম থেকে আমাকে ঢাকায় পাঠানোর যে চিন্তা করেছিলেন, সেই সাহস কিভাবে করেছিলেন তা আমার তখন কল্পনাতে ছিল না। ঢাকায় এসেই মুলত আমার লাইফ চেঞ্জ হয়ে যায়।” 

ক্লায়েন্টকে খুশি রাখার তিনটি টিপস

তৌহিদ রাহমান এখন পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সে ১২,০০০ ঘন্টার উপর কাজ করে ফেলছেন। তাই তিনি ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস সম্পর্কে  খুঁটিনাটি অনেক কিছুই জানেন। তাকে তার কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই ক্লায়েন্টকে খুশি রাখার কিছু টিপস দিতে বলা হয়। তার ইন্টারভিউয়ের কিছু অংশ তুলে ধরা হলঃ

“প্রথমত আমি বলবো হার্ড ওয়ার্ক। হার্ড ওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি আপনার আল্টিমেট গোল এ অবশ্যই পৌঁছাতে পারবেন। এটি ছাড়া কোন বিকল্প নেই। 

সেকেন্ডলি বলবো কমিউনিকেশন স্কিল এর কথা। কমিউনিকেশনে আমাদের অনেক বড় ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমি দেখেছি অনেক বড় বড় ফ্রিল্যান্সাররা ও কমিউনিকেট করতে পারে না তাদের ক্লায়েন্টের সাথে। যার কারনে অনেক প্রজেক্ট হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। যারা ভাল কমিউনিকেশন বজায় রাখতে পারবে, তারা ধীরে ধীরে সাকসেস এর দিকে এগিয়ে যাবে। প্রজেক্ট কিভাবে প্ল্যানিং করছে, কিরকম টাইম সেইভ করা হচ্ছে, ক্লায়েন্ট কে কনভিন্স করা এসব গুন ভালভাবে আয়ত্ত করতে হবে। 

ফাইনালি আমি বলবো প্রফেশনালিজমের কথা যেটি আমাদের দেশের অনেকের অভাব। আমাদের দেশের অনেক ফ্রিল্যান্সাররা ক্লায়েন্ট এর সাথে ঠিকমত ডিল করে না। যার কারনে, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের অনেক নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট বিল্ড হতে থাকে, যা পরবর্তীতে অনেক ভাল ফ্রিল্যান্সারদের কাজ পেতে অসুবিধা করে।”

নতুনদের জন্য কিছু টিপস

নতুনদের জন্য কিছু টিপস দিতে বলা হলে তিনি বলেন, “ নতুনদের জন্য বলবো ইউটিউবে অনেক টিটোরিয়াল এবং ম্যাটেরিয়াল রয়েছে যেগুলো দিয়ে শুরু করা যায়। প্রচুর রিসার্চ করার মেন্টালিটি থাকতে হবে। আপনার যেই এরিয়া তে কাজ করতে ভাল লাগে, সেগুলোর কাজ শিখতে হবে এবং সাথে কমিউনিকেশন স্কিল নিয়ে কাজ করতে হবে। এছাড়া কাজ শিখে আপনি লোকাল কোম্পানি বা লোকাল ফ্রিল্যান্সার দের আন্ডারে কাজ করতে পারেন। যাতে করে আপনি আপনার পোর্ট ফলিও রেডি করতে পারেন। এভাবে যারা শুরু করে তারাই কোয়ালিটি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকে। তারা এসে মার্কেট প্লেস নষ্ট করে না এবং মোস্ট কেসে এ তারা সাকসেসফুল হয়।

নতুনদেরকে আমি সবসময় ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেসে কাজ করতে উৎসাহ দিব কেননা, এখানে অনেক এমপ্লয়মেন্ট অপরচুনিটি আছে। যারা বহুদিন ধরে এই মার্কেট প্লেসে আছে, তাদের কাছে এটি লাইফ স্টাইলে পরিণত হয়েছে। তাই নতুন যারা আসবে তারা এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে মার্কেটপ্লেস এ এন্ট্রি নিবে এবং সাকসেস পাবে এই আশা করছি।”