কামরুজ্জামান শিশির ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে ৫ বছর ধরে কাজ করছেন এবং প্রায় দুই বছর হলো তিনি ফাইবার এ টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার হয়েছেন। তিনি নিজেকে কখনো ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচয় দিতে পচ্ছন্দ করেন না বরং সবাই তাকে ডিসাইনার হিসেবে চিনুক তিনি সেই স্বপ্ন দেখেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রাফিক্স ডিসাইনিং সেক্টরে তিনি খুব পরিচিত এবং পপুলার। তিনি ক্যারেক্টার লোগো ডিসাইন বিষয়ে খুব দক্ষ। তিনি বিভিন্ন ইউনিক ডিসাইন বাংলাদেশের মার্কেট প্লেসে তুলে ধরতে চান যেগুলো ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট প্লেসে ট্রেন্ড হিসেবে চলছে। 

কখন এবং কিভাবে শুরু করা

 কিভাবে শুরু করা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আজ থেকে আনুমানিক ছয় বছর আগে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেস সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না কিন্তু আমি বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ স্কিল গুলো শিখতে ভালোবাসতাম। আমি আমার জার্নি শুরু করি একটি লো-কনফিগের কম্পিউটার এবং স্লো ইন্টারনেটের কানেকশন নিয়ে। আমি বিশ্বাস করেছিলাম যেকোন কিছু পসিবল হবে যদি সে কাজ করার জন্য প্রপার ডেডিকেশন থাকে।” 

তিনি যেসব কাজ করে থাকেন

শিশির দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ডিসাইনিং কাজের সাথে জড়িত। এত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে তিনি এখন বায়ার থেকে আসা যে কোন চ্যালেঞ্জ ফেস করতে কনফিডেন্ট ফিল করেন। শিশির তার কাজ সম্পর্কে বলেন, “আমি গ্রাফিক্স ডিসাইন করে থাকি, স্পেশালি ক্যারেক্টার লোগো ডিসাইন এবং ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন এর কাজ করি। এছাড়া আমি ফ্রিল্যান্সার, মাইক্রোস্টকার, ট্রেইনার এবং একজন ভাল লার্নার। আমার ডিসাইন গুলো আমি ইউনিক এবং অরিজিনাল রাখার চেষ্টা করি। প্রথমত, আমি স্কেচ করে লোগো আইডিয়া জেনারেট করে থাকি এবং এরপর ঐ ড্রয়িংটিকে কালার এবং ভেক্টরাইজড করে ফাইনাল রেন্ডারিং করি।” 

যেসব স্কিল প্রয়োজন

গ্রাফিক্স ডিসাইন সেক্টরে কাজ করার জন্য শিশিরের মত ক্রিয়েটিভ ডিসাইনারের ভাষ্যমতে, “এই ক্যাটাগরিতে, একজন ফ্রিল্যান্সারের কিছু স্কিল থাকা প্রয়োজন যেমনঃ ফ্রিহ্যান্ড ড্রয়িং, কালার সেন্স, ডিজিটাল এপ্লিকেশনের কিছু নলেজ (ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর) এবং ইমাজিনেশন পাওয়ার। এছাড়া আপনাকে গ্রাফিক-ট্যাবলেট ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করতে হবে। রেগুলার প্র্যাকটিস এর মাধ্যমে স্কিল ধীরে ধীরে গ্রো করতে থাকবে।” তিনি সবসময় অন্যান্য বড় ডিসাইনারদের কাজ ফলো করেন এবং তারা কি কাজ করেছে সে সম্পর্কে ধারণা রাখেন। শিশির বলেন, “বিহান্সে আমি বড় বড় ডিসাইনার দের কাজ দেখি। তারা ডিসাইনে কি কি টুইস্ট আনে সেগুলো দেখি। তারা ওভারলে তৈরি করে কিভাবে বা কালার গ্রেডিয়েন্ট কিভাবে ব্যবহার করলো এসব ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। আমি মনে করি ডিসাইনিং প্র্যাকটিস করবেন ৪০% এবং অন্যদের দেখবেন ৬০%। এতে করে ইমাজিনেশন এবং কনসেপ্ট ডেভেলপ হতে থাকে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া যে সাইটগুলো আছে যেমনঃ ইনস্টাগ্রাম বা ফ্রিপিক এখানে বড় বড় ডিসাইনারদের ফলো করে রাখবেন। তাদের কাজ দেখে দেখে অনেক লার্নিং কালেক্ট করতে পারবেন।” 

ফ্রিল্যান্সিং কেন

“ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে সঠিক উপায়ে অর্জন করার বেস্ট পথ। এটি সহজ এবং কমফোর্টেবল একটি প্ল্যাটফর্ম কিন্তু কিছু কিছু সময় এটি কঠিন মনে হবে যদি আমি বায়ার দের সাথে কনফিডেন্স সহকারে কমিউনিকেট না করে থাকি। এছাড়া আমার কাছে পর্যাপ্ত সময় থাকে ফ্যামিলির দেখাশোনার জন্যে এবং আমি যেকোনো জায়গায় ঝামেলা বিহীন যেতে পারি।”

জার্নি কেমন ছিল

“প্রতিটি জার্নি শুরুতে আমার কাছে মেমোরেবল এবং কঠিন মনে হয়। এই জার্নি ও আমার কাছে মেমোরেবল। আমাদের সময়টাতে তেমন কমিউনিটি বিল্ড আপ হয়নি যেটি বর্তমানে রয়েছে। বর্তমানে কোন প্রবলেম এ পড়লে যে কেউ গ্রুপে পোস্ট করে সলিউশন নিয়ে নেয়। আমাদের সময়ে আমরা তেমন কোন গাইডলাইন পাইনি। ঐ সময় প্রচুর ডিমোটিভেটেড হয়েছিলাম। দিনের পর দিন আমি ঘুম হীন কাটিয়েছি। সে সময় গ্রাফিক্স ডিসাইনিং এর পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিসাইনিং এর উপর পড়াশোনা করেছি এবং বেশ কিছু সময় এটি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এরপর ফ্রিল্যান্সিং এ আসা এক বড় ভাইয়ের সাহায্যে। এই কয়েক বছরে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করেছি এবং আমি সবসময় টাইম এবং ক্লায়েন্টের চাওয়াকে প্রায়োরিটি হিসেবে সেট করে কাজ সাবমিট করেছি।”   

আপনার অনুপ্রেরণা 

ফ্রিল্যান্সিং এ তার অনুপ্রেরণা কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “প্রথমত, ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ছিল না। এক ফ্রেন্ড এর থেকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রথম শুনি। এছাড়া ইন্টেরিয়র ডিসাইন পড়ার সময় সেই প্রতিষ্ঠানের এক বড় ভাই আমাকে অনেক গাইড করেছে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য। আমি কখনো ভাবিনি যে আমি ডিসাইনার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করবো। সেই বড় ভাই ও ডিসাইনিং এর কাজ করতেন এবং তার করা কাজ গুলো আমাকে দেখাতেন। কাজ গুলো দেখে ইন্টারেস্টেড হয়ে ফাইবার মার্কেটপ্লেসে কাজ করার ডিসিশন নেওয়া। এটি আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কিন্তু আমি কখনো চেষ্টা করা ছাড়ি নি যতক্ষণ পর্যন্ত আমি সাকসেসফুল হয়েছি। আমি তার প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞ থাকবো। এছাড়া আমি বেশ কিছু ফ্রেন্ড এবং ফ্যামিলি মেম্বারদের থেকে ও ইন্সপায়ার্ড হয়েছি।”

যে মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন 

“ব্যাসিকেলি, আমি ফাইবার এ টপ রেটেড সেলার হিসেবে আছি কিন্তু আমি বেশ কিছু মাইক্রোস্টক মার্কেটে ও কাজ করছি, যেমনঃ ফ্রিপিক, শাটারস্টক, ক্রিয়েটিভ ফ্যাবরিকা। আমি ডিজিটাল এলিমেন্ট গুলো যেমনঃ ইলাস্ট্রেশন, লোগো, আইকন, বুক কাভার ডিসাইন, ওয়েব এলিমেন্ট এরকম আর ও বেশ কিছু সার্ভিস সেল করে থাকি।”

ক্লায়েন্টকে খুশি রাখার টিপস

ক্লায়েন্টকে খুশি রাখার তিনটি টিপস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “প্রথমত, ক্লায়েন্টকে কনভিন্স করার জন্য আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ভাল থাকা লাগবে। এরপর আপনি কিছু সলিউশন এবং আইডিয়া দিতে পারেন আপনার ক্লায়েন্টকে তার স্টার্টআপ গ্রো করতে। এতে আপনার ক্লায়েন্ট খুশি হবে এবং আপনাকে ট্রাস্ট করবে। এছাড়া আপনি আপনার কাজের বেস্ট কোয়ালিটি মেইন্টেইন করবেন এবং আপনার কাজ ডেডলাইনের আগে ডেলিভার করার চেষ্টা করবেন।”

নতুনদের জন্য টিপস

“নতুনদের জন্য টিপস হবে এমন কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না যার ফিল্ড রিলেটেড কোন এক্সপেরিয়েন্স নেই। প্রচুর শিখতে হবে, প্র্যাকটিস করতে হবে এবং আর্নিং নিয়ে শুরুতে মাথা ঘামানো যাবে না । আর্নিং নিজে থেকে হতে থাকবে যখন আপনি আপনার কাজের প্রতি প্রপার স্কিল এবং কনফিডেন্স শো করবেন। শুরুতে বায়ার এর সাথে রিলেশন বিল্ড আপে ফোকাস করুন এবং রেসপন্স রেট বা প্রজেক্ট ডেলিভারি টাইম এগুলো ঠিক ভাবে মেইন্টেইন করার চেষ্টা করুন। এছাড়া ধৈর্য রাখতে হবে এবং ডিসাইনিং কে ভালবাসতে শিখতে হবে। আমি এক্ষেত্রে বলবো প্রায় অনেকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কাজ বা ডিসাইনিং করার পর রিলেক্সড হওয়ার জন্য গেইম খেলে বা হাটাহাটি করে, কিন্তু আমি স্কেচ করি, নতুন কাজের জন্য আইডিয়া জেনারেট করি। তাই নতুনদের উদ্দেশ্যে বলবো গ্রাফিক্স সেক্টরে যে সব নিস রয়েছে সেগুলো নিয়ে রিসার্চ করুন, এক জায়গায় নিজের স্কিল কে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন জায়গায় প্রোফাইল মেইন্টেইন করুন এবং ডিসাইনিং কে ভালবেসে কাজ করুন।”