ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাট (Buereau of Labor Statistics) এর মতে, বেশির ভাগ প্রফেশনাল এডিটর নিউইয়র্কে বাস করে, যে শহরটি অনেক গুলো ম্যাগাজিন এবং বই পাবলিশিং এর সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত। তবে আপনি পৃথিবীর যে কোন জায়গায় থাকতে পারেন এবং ফ্রিল্যান্সিং এডিটর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। একবার আপনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলে, এই কাজ আপনার জন্য অনেক ফলপ্রসূ এবং আকর্ষণীয় হতে পারে। আপনি ধীরে ধীরে বিভিন্ন রকম প্রজেক্টে এ যুক্ত হতে পারবেন এবং আপনার অনেক লার্নিং এক্সপেরিয়েন্স হবে।
আজকের এই স্টেপ বাই স্টেপ গাইডটি তাদের জন্য যারা ফ্রিল্যান্স এডিটিং এ ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য আগ্রহীঃ
আপনাকে পড়তে হবে যত বেশী পারা যায়
প্রথম যে গুনটি সবথেকে ইম্পরট্যান্ট এডিটিং ক্যারিয়ারে সেটি হচ্ছে আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে এবং পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আপনাকে জানতে হবে কি ধরনের স্টোরি ট্রেন্ডিং হচ্ছে এবং রিডাররা কি ধরনের কন্টেন্ট চাচ্ছে। তাই আপনার যে কোন টপিকের উপর পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে হোক সেটি আপনার অপচ্ছন্দের। এটি নিশ্চিন্ত করা্র মানে হচ্ছে আপনি রাইটারদের তাদের লিখায় গাইড করতে পারবেন। লিখা ভাল হওয়া মানে হচ্ছে আপনার অডিয়েন্স ও সেই স্টোরি কে এঞ্জয় করবে, সবার সাথে শেয়ার করবে।
এডিটিং এর স্কিল শিখা
আপনাকে এডিটর হওয়ার জন্য কোন ফরমাল এডুকেশন এর দরকার পড়বে না। কিন্তু বেসিক স্কিল গুলো আপনাকে আয়ত্ত করতে হবে যদি আপনি প্রফেশনালি কাজ করতে চান। এ ক্ষেত্রে, আপনি অনলাইনে এডিটিং কোর্স করে নিতে পারেন অথবা কোন রাইটারের ওয়ার্কশপ এ জয়েন করতে পারেন।
এডিটিং কাজগুলো খুজুন এবং জয়েন করুন
এক্সপেরিয়েন্স বিল্ড আপ করতে আপনি এডিটিং জব খোঁজতে পারেন। আপনি জব লিস্টিং সাইট গুলো চেক করতে পারেন, সেখানে বিভিন্ন প্রকারের কাজ থাকে। নিজেকে এডিটর হিসেবে গড়তে চাইলে আপনি ইতিমধ্যে যে স্কিল ডেভেলপ করেছেন তার একটি টেস্ট করার জন্য প্রথমে এরকম কিছু জব ট্রাই করে দেখতে পারেন। এছাড়া ইন্টার্নশীপ এর প্রচুর অফার পাওয়া যায়, সেগুলো ও আপনার চেকলিস্টে রাখবেন। এরকম জবে আপনার ইনকাম খুব বেশী হবে না, কিন্ত ভবিষ্যতে পোর্ট ফলিও তে এড করার জন্য এটি দারুন শুরু হতে পারে। এক্ষেত্রে, আপনার স্কিল এক সাথে টেস্ট হচ্ছে এবং নতুন একটি লার্নিং ও অর্জন করতে পারবেন।
নিস (Niche) সিলেক্ট করুন
আপনার কাজের এক্সপেরিয়েন্সের উপর কিছুদিন পর আপনি বিশাল একটি বেনিফিট পাবেন এবং সেটি হচ্ছেঃ আপনি কোন ধরনের এডিটিং পচ্ছন্দ করেন সেটি সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকবে। লং টার্মে আপনি কি কাজ করতে চলেছেন, সেটি সম্পর্কে ধারণা থাকা মানে আপনার গোল অর্জন করা অন্য সবার থেকে অনেক সহজ হবে। এজন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে এরকম কিছু জব করে নিজেকে ঝালাই করে নেওয়া উচিত।
এখন যারা জানেন না, ফ্রিল্যান্স এডিটিং এ কি রকম নিস রয়েছে তাদের জন্য ক্লিয়ার করে লিখবো। প্রথমে আসি এডিটিং এর মেইন তিনটি ক্যাটাগরি সম্পর্কে আলোচনা নিয়েঃ
১) ডেভেলপমেন্ট এডিটর
তারা কন্টেন্ট রিভিউ, স্টাকচারিং এবং কন্টেন্ট ফ্লো ঠিক আছে কিনা তার কাজ করে।
২) কপি এডিটর
গ্রামার চেক করা, টেক্সট এর মেকানিসম ঠিক আছে কিনা, ওয়ার্ড চয়েজ ঠিক আছে কিনা, বাক্যের স্টাকচার দেখা এসব কাজগুলো কপি এডিটররা করে থাকে। তারা মাঝে মাঝে লাইন এডিটিং ও করে থাকে।
৩) প্রুফরিডার (Proofreader)
প্রুফরিডার এর কাজ হচ্ছে লিখিত কন্টেন্টকে রিভিউ করে ফিডব্যাক দেওয়া। কোন টাইপিং মিস্টেক অথবা ভুল থাকলে সেটি তারা জানিয়ে দেয়।
এছাড়া কমন কিছু এডিটর দের ক্যাটাগরি আছে, সেগুলো হচ্ছেঃ বুক এডিটর, ম্যাগাজিন এডিটর, একাডেমিক এডিটর, ওয়েব এডিটর।
বুক এডিটর
বুক এডিটর রা পঞ্চাশ হাজার ওয়ার্ডের ম্যানুস্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করে থাকে। এডিটিং এর সবচেয়ে ইন্টেনসিভ এরিয়া হচ্ছে এটি। ডেভেলপমেন্ট এডিটর যারা হতে চান, তাদের জন্য এটি বেস্ট অপশন। কারন এতে আপনি বিভিন্ন প্রজেক্ট এ যুক্ত হতে পারবেন। ফিকশন, নন-ফিকশন এবং বিভিন্ন জনরা এগুলোর মধ্যে আছে।
ম্যাগাজিন এডিটর
এই এডিটর রা মুলত বিভিন্ন নিউজ, ফিচার, আর্টিকেল, অপিনিয়ন এসব পাবলিকেশনের জন্য কাজ করে থাকে। এগুলো ১,০০০-২,০০০ ওয়ার্ডের কন্টেন্ট হয়ে থাকে।
এখানে কাজ করার জন্য জার্নালিসম এ ডিগ্রী থাকা লাগে।
একাডেমিক এডিটর
একাডেমিক এডিটর রা রিসার্চ পেপার, থিসিস পেপার এসব নিয়ে কাজ করে থাকে। এই পেপার গুলো কাজের ভিত্তিতে ২০-২০০ পেইজের হয়ে থাকে। আবার এই ফিল্ডে এপ্লাই করতে আপনার পোস্ট-গ্রাড ডিগ্রি থাকা লাগবে এবং এক্সপেরিয়েন্স আর স্কিল এর ভিত্তিতে আপনি সিলেক্টেড হবেন। এই জবটি মুলত তাদের জন্য ক্যারিয়ার অপশন হবে যাদের ইতিমধ্যে মাস্টার্স অথবা পিএইচডি (PhD) ডিগ্রি রয়েছে।
ওয়েব এডিটর
তারা বিভিন্ন রকম অনলাইন সোর্স এর জন্য কন্টেন্ট বানিয়ে থাকে। ওয়েব এডিটর হতে চাইলে, আপনাকে এসইও (SEO) টেকনিক সম্পর্কে জানা থাকা লাগবে এবং বিভিন্ন কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট টুল সম্পর্কে ধারণা থাকা লাগবে।
ওয়েবসাইট তৈরি করুন
যখন নিজের বাকেটে কিছু কাজের এক্সপেরিয়েন্স জমা হয়ে যাবে এবং সাথে আপনি আপনার সিলেক্টেড নিস নিয়ে ও ডিসিশন নিয়ে ফেলেছেন, তখন আপনার ঐ নিসের উপর বিভিন্ন কাজ খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিটি জব ফিল্ডে গ্রো করার সুযোগ থাকে। ব্যতিক্রম নয় এডিটিং জবের ক্ষেত্রে ও। আপনার সার্ভিস এবং পোর্ট ফলিও সবার জন্য ওপেন করে দিতে হবে। তাই আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা জরুরী। আপনার ওয়েবসাইট থেকে আপনার পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট আপনি কতটা প্রফেশনাল তা যাচাই করে থাকে। তাই ওয়েবসাইট বানিয়ে ফেলুন এবং সাথে সেটিকে রেগুলার আপডেট করুন। এডিটিং রিলেটেড ব্লগ লিখা শুরু করে দিতে পারেন, এতেও ক্লায়েন্ট আকর্ষিত হয়।
নেটওয়ার্ক বিল্ড করুন
এই কাজ হচ্ছে আপনার কাজের বাইরে সবথেকে ইম্পরট্যান্ট কাজ। আপনাকে রেগুলারলি অন্য এডিটর দের সাথে কমিউনিকেশন চালিয়ে যেতে হবে। এডিটরদের কমিউনিটি বানাতে হবে। আপনাকে পপুলার এডিটরিয়াল ফ্রিল্যান্স গ্রুপ খুঁজে বের করে সেখানে জয়েন করতে হবে। আপনার কাছে যত কন্টাক্ট থাকবে, ওয়ার্ক রেফারেল পাওয়ার সম্ভাবনা আপনার তত বেড়ে যাবে। এছাড়া আপনি আপনার টিচার, ফ্রেন্ড সার্কেল, কো-ওয়ার্কার থেকে ও সাহায্য চাইতে পারেন। এই স্টেপটি আপনি আপনার এ পর্যন্ত সকল এফোর্ট এর কালেকশন হিসেবে চিন্তা করতে পারেন।
আপনি এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করেছেন এবং আপনার স্কিল ও আছে, শুধু আপনার এখন একটি চান্স লাগবে। আপনার কোথা থেকে কল আসবে তা আপনি নিশ্চিন্ত করে বলতে পারবেন না, তাই আপনার এই সুযোগ নষ্ট করা যাবে না। যত সম্ভব লোকজনের সাথে কন্টাক্ট রাখার চেষ্টা করুন।
আপনি যে রকম এডিটিং ক্যারিয়ার পথ বাছাই করুন না কেন, শুরু তে এর কিছু ডাউন সাইড থাকবেই। কিন্তু আপনি যদি ফ্রিল্যান্স এডিটিং কে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে ডিসাইড করে থাকেন, এর রিওয়ার্ড আপনি দেরিতে হলেও পাবেন। এই কাজের এত ইন্ডিপেন্ডেন্সি, ক্রিয়েটিভিটি, ইউনিকনেস থাকবে যা আপনাকে আপনার কাজের উপর স্যাটিফেকশন এনে দিতে সাহায্য করবে।